কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন, শুক্র গ্রহ সম্ভবত কখনোই তরল পানি ধারণ করেনি। গবেষণা বলছে, গ্রহটি তার ইতিহাস জুড়েই শুষ্ক ছিল।
গবেষণার প্রধান লেখক তেরেজা কনস্টান্টিনো ও তার সহকর্মীরা বলছেন, শুক্র নিয়ে দুটি প্রধান তত্ত্ব রয়েছে। প্রথমটি বলে, গ্রহটির পৃষ্ঠে তরল পানি ছিল এবং এটি কয়েকশ কোটি বছর ধরে নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু ধরে রেখেছিল। আর দ্বিতীয় তত্ত্ব অনুযায়ী, শুক্র সবসময় এতটাই গরম ছিল যে, তরল পানি জমার কোনো সুযোগই পায়নি।
গবেষণায় শুক্র গ্রহের বর্তমান বায়ুমণ্ডলের একটি মডেল তৈরি করে দেখা গেছে, গ্রহটি কখনোই পানির অস্তিত্ব থাকার মতো পরিস্থিতি তৈরি করেনি। নাসার বর্ণনায়, বর্তমান শুক্রকে “নারকীয় পৃথিবী” বলা যেতে পারে। এর পৃষ্ঠের তাপমাত্রা প্রায় ৪৬৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, এবং বায়ুমণ্ডলীয় চাপ পৃথিবীর তুলনায় ৯০ গুণ বেশি। বিষাক্ত সালফিউরিক অ্যাসিডের ঘন মেঘ গ্রহটিকে স্থায়ীভাবে ঢেকে রেখেছে।
বিজ্ঞানীরা আরও জানিয়েছেন, শুক্রের অভ্যন্তরে হাইড্রোজেনের উল্লেখযোগ্য ঘাটতি রয়েছে। এর ফলে গ্রহটি পৃথিবীর মতো তরল পানি ধারণ করতে পারেনি। তাদের মতে, শুক্রের বায়ুমণ্ডলে যে সামান্য পরিমাণ পানি ছিল, তা বাষ্পায়িত হয়ে যায়।
২০১৬ সালে নাসার গডার্দ ইনস্টিটিউট অফ স্পেস স্টাডিজ (জিআইএসএস)-এর বিজ্ঞানীরা দাবি করেছিলেন, একসময় শুক্র বাসযোগ্য ছিল। তাদের কম্পিউটার মডেল, যা পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তন মডেলের অনুরূপ, দেখিয়েছিল যে, গ্রহটি বর্তমানের তুলনায় অনেক শীতল এবং বাসযোগ্য পরিবেশ ধরে রেখেছিল।
তবে, ২০২৩ সালে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকটি গবেষণায় দাবি করা হয়, শুক্রের ইতিহাসের ৭০ শতাংশ সময় এটি অবাসযোগ্য ছিল। এ ধারণা আগের অনুমানগুলোর তুলনায় চার গুণ দীর্ঘ সময়কে নির্দেশ করে।
শুক্র গ্রহের পরিবেশ এবং ইতিহাস নিয়ে বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান এখনো চলমান। নতুন গবেষণাগুলো এই গ্রহের অতীত এবং বর্তমান সম্পর্কে আমাদের উপলব্ধিকে সমৃদ্ধ করছে। তবে শুক্রের প্রকৃতি এবং এর বিবর্তন সম্পর্কে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে আরও বিশদ গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।
thebgbd.com/AR