দীর্ঘ সময় ধরে বসে থাকা আমাদের আধুনিক জীবনের একটি সাধারণ অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অফিসের কাজ, অনলাইন মিটিং কিংবা পড়াশোনা—প্রায় সব ক্ষেত্রেই মানুষকে লম্বা সময় বসে থাকতে হয়। তবে এই অভ্যাস শরীরের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। পিঠ, ঘাড় বা কোমরের ব্যথা থেকে শুরু করে হৃদরোগের ঝুঁকিও বাড়তে পারে।
দীর্ঘ সময় বসে থাকার ক্ষতিকর প্রভাব আছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা শরীরে নিম্নলিখিত প্রভাব ফেলে:
১. পিঠ ও কোমরের ব্যথা: বসে থাকার ফলে মেরুদণ্ডের উপর চাপ পড়ে, যা ব্যথার কারণ হতে পারে।
২. রক্ত সঞ্চালনে বাধা: এক জায়গায় বেশি সময় বসে থাকলে রক্ত চলাচল ধীর হয়ে যায়, যা ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিসের (DVT) ঝুঁকি বাড়ায়।
৩. মেটাবলিজমের ক্ষতি: দীর্ঘ সময় বসে থাকার ফলে ক্যালরি খরচ কমে যায় এবং মেদ জমে।
৪. হৃদরোগের ঝুঁকি: গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘ সময় বসে থাকা হৃদরোগ এবং টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়।
৫. মানসিক প্রভাব: দীর্ঘ সময় বসে থাকার ফলে মানসিক চাপ এবং হতাশার ঝুঁকিও বাড়তে পারে।
বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘ সময় বসে থাকার সমস্যা এড়াতে কয়েকটি কার্যকর কৌশল এবং অভ্যাসের পরামর্শ দিয়েছেন।
১. প্রতি ৩০ মিনিটে একবার উঠুন: বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতি ৩০-৪৫ মিনিট অন্তর কয়েক মিনিটের জন্য উঠে হাঁটা উচিত। এটি রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় এবং পেশি সচল রাখে।
২. সঠিক বসার ভঙ্গি অনুসরণ করুন: মেরুদণ্ড সোজা রাখুন। পা মাটিতে সমানভাবে রাখুন। চেয়ারের পিঠে পুরোপুরি হেলান দিয়ে বসুন।
৩. শরীরচর্চা করুন: প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট ব্যায়াম করুন। কাজের সময়ে হাত ও পায়ের হালকা স্ট্রেচিং করুন। ক্যাট-কাউ বা কোবরা স্ট্রেচ এর মতো ব্যায়াম পিঠ ও কোমরের ব্যথা কমাতে কার্যকর।
৪. আর্গোনমিক আসবাব ব্যবহার করুন: বিশেষজ্ঞরা বসার জন্য আরামদায়ক এবং আর্গোনমিক চেয়ার ব্যবহারের পরামর্শ দেন। চেয়ার এমন হতে হবে, যা মেরুদণ্ডের স্বাভাবিক বাঁককে সমর্থন করে।
৫. পানির বোতল রাখুন: কাজের সময় পর্যাপ্ত পানি পান করুন। হাইড্রেশন শরীরকে সক্রিয় রাখতে সাহায্য করে।
৬. মনোযোগ বাড়াতে ছোট বিরতি: কাজের ফাঁকে চোখের বিশ্রাম দিন এবং মানসিক চাপ কমাতে ধ্যান বা শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করুন।
অর্থোপেডিক সার্জন ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘ সময় বসে থাকা পিঠ ও কোমরের জন্য ক্ষতিকর। স্ট্রেচিং এবং নিয়মিত বিরতি নিলে এ সমস্যা অনেকাংশে কমানো যায়। এছাড়া পুষ্টিবিদ ডা. নাজিয়া হক বলেন, দীর্ঘ সময় বসে থাকলে মেটাবলিজম ধীর হয়ে যায়। এজন্য কম চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া এবং হাঁটাচলা করা প্রয়োজন।
দীর্ঘ সময় বসে থাকা আধুনিক জীবনের একটি চ্যালেঞ্জ। তবে কিছু অভ্যাস পরিবর্তন এবং শারীরিক সচেতনতার মাধ্যমে এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম আমাদের সুস্থ ও কর্মক্ষম রাখতে পারে।