জাতীয় সংসদের ৩০০টি আসনের মধ্যে ৬২টি আসনের সীমানা নিয়ে এখনও জটিলতা বিদ্যমান। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ১০টি আসনে সীমিত পরিবর্তন আনা হলেও বেশিরভাগের সমস্যার সমাধান হয়নি। ১৯৮৪ ও ১৯৯১ সালের পর, ২০০৮ সালে ড. এ টি এম শামসুল হুদা কমিশন নবম সংসদ নির্বাচনের জন্য ১০০টিরও বেশি আসনে সীমানা পুনর্বিন্যাস করেছিলেন। এরপর কাজী রকিবউদ্দিন আহমদ কমিশন দশম নির্বাচনে ৫০টি আসনের সামান্য পরিবর্তন আনেন। একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে, ২০১৮ সালের ৩০ এপ্রিল কমিশন ২৫টি আসনের সীমানা পরিবর্তন করে গেজেট প্রকাশ করেছিল।
বর্তমান সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার আগেই ৫০টিরও বেশি আবেদন জমা পড়েছে। পিরোজপুর, মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকার কিছু আসনকে ঘিরে এই আবেদনগুলো বেশি এসেছে। নতুন নির্বাচন কমিশন এসব আবেদন সংশ্লিষ্ট কমিটির কাছে পাঠিয়েছে বলে জানা গেছে।
নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কমিশনকে সীমানা জটিলতার সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। অতীতে সীমানা জটিলতা নিয়ে অনেক মামলার সম্মুখীন হতে হয়েছে। অনেক এলাকার মানুষ দীর্ঘদিন ধরে সীমানা পুনর্বিন্যাসের দাবি জানিয়ে আসছেন। তারা বলছেন, কিছু আসনের সীমানা এখনও ৯০ কিলোমিটার বিস্তৃত। তিন-চারটি উপজেলা নিয়ে একটি আসন গঠিত হওয়ায় অনেক আসনে ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে আসনের জনসংখ্যার পার্থক্য ২৫ শতাংশেরও বেশি।
২০০৮ সালের পর সীমানায় বড় ধরনের পরিবর্তন আসেনি। ২০২৩ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য সীমানা খসড়া গেজেট প্রকাশ করা হয়। তখন কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, ১৯ মার্চ পর্যন্ত আপত্তি জানানো যাবে। সারা দেশ থেকে ১৮৬টি আপত্তি জমা পড়েছিল। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৮৪টি আবেদন আসে কুমিল্লা অঞ্চল থেকে। রাজশাহীতে ৪৩টি, বরিশালে ২৯টি, ঢাকা অঞ্চলে ১৮টি এবং খুলনা ও ফরিদপুর অঞ্চলে পাঁচটি করে আবেদন জমা পড়ে। তবে সিলেট ও রংপুর অঞ্চল থেকে কোনো আবেদন আসেনি।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, বিভিন্ন জেলার আসনসমূহে জনসংখ্যার ভারসাম্যহীনতা রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, কুমিল্লা ও ময়মনসিংহে ১১টি করে আসন রয়েছে, যেখানে কুমিল্লার জনসংখ্যা ৫৩ লাখ এবং ময়মনসিংহের ৫১ লাখ। টাঙ্গাইলের জনসংখ্যা ৩৬ লাখ হলেও সেখানে ৮টি আসন রয়েছে। অন্যদিকে, গাজীপুরে ৩৪ লাখ ও নারায়ণগঞ্জে ২৯ লাখ জনসংখ্যা নিয়ে মাত্র ৫টি করে আসন রয়েছে। চুয়াডাঙ্গার মতো ছোট জেলা, যেখানে ১১ লাখ জনসংখ্যা রয়েছে, তাতেও ২টি আসন বরাদ্দ করা হয়েছে।
কিছু আসনের ভোটার সংখ্যার বিশ্লেষণে দেখা যায়, গাজীপুর-১ আসনে ৬ লাখ ৯৫ হাজার ৮৫২ জন ভোটার, কুমিল্লা-২ আসনে ২ লাখ ৮২ হাজার ৬২২ জন এবং সুনামগঞ্জ-১ আসনে ৪ লাখ ৬২ হাজার ৬৯৫ জন ভোটার রয়েছে। অন্যদিকে ঠাকুরগাঁও জেলার বিভিন্ন আসনে ভোটারের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য পার্থক্য দেখা যায়। যেমন, ঠাকুরগাঁও-১ আসনে ৪ লাখ ৮০ হাজার ৬০৪ জন ভোটার, আর ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে ৩ লাখ ৪৪ হাজার ৩৫৪ জন ভোটার। রাণীশংকৈল উপজেলার ভোটারদের দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে, যা আরও অসামঞ্জস্যের উদাহরণ।
thebgbd.com/NIT