ঢাকা | বঙ্গাব্দ

উত্তরায় জামায়াতের বিজয় র‍্যালি

স্বাধীনতা হাইজ্যাক করায় তা অর্থবহ হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াত নেতা মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন।
  • নিজস্ব প্রতিবেদক | ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪
উত্তরায় জামায়াতের বিজয় র‍্যালি ছবি : সংগৃহীত।

আওয়ামী-বাকশালীরা মহান স্বাধীনতা ও বিজয়কে হাইজ্যাক করায় আমাদের জন্য স্বাধীনতা পুরোপুরি অর্থবহ হয়ে ওঠেনি বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন। 


আজ সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) সকাল ১০ টায় রাজধানীর উত্তরায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তরের উত্তরা জোনের উদ্যোগে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে এক বিশাল র‌্যালি পরবর্তী আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। র‌্যালির পরে আজমপুরে আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উত্তরা পশ্চিম অঞ্চল পরিচালক ও মহানগরী নায়েবে আমির ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফার সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি ড.মুহাম্মদ রেজাউল করিমের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত হয়। বিজয় র‌্যালি উত্তরা ১১ চৌরাস্তা জমজম টাওয়ারের সামনে থেকে শুরু হয়ে উত্তরা আজমপুর এসে শেষ হয় এবং পরে এক আলোচনা সভায় মিলিত হয়।


র‌্যালিতে নেতৃত্ব দেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন। উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরী উত্তরের নায়েবে আমির মোহাম্মদ আব্দুর রহমান মূসা ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের নায়েবে আমির ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফা, মহানগরী সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম, কেন্দ্রীয় মজলিসের শূরা সদস্য জামাল উদ্দিন, মহানগরী উত্তরের প্রচার-মিডিয়া সম্পাদক মু. আতাউর রহমান সরকার, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি এইচ এম আতিকুর রহমান, উত্তরা অঞ্চলের সহকারী পরিচালক মাহবুবুল আলম, মহানগরী মজলিসে শূরা সদস্য এডভোকেট ইব্রাহিম খলিল, মাজহারুল ইসলাম, আবু সাঈদ, মতিউর রহমান প্রমুখ।


র‌্যালীতে হাজার হাজার ছাত্র-জনতা অংশ নিয়ে ‘ নায়েরে তাকবির; আল্লাহু আকবার’ ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী; জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ’ ‘ বিজয় দিবস দিচ্ছে ডাক; ফ্যাসিবাদ নিপাত যাক’ ‘ভারতের দালালেরা; হুঁশিয়ার-সাবধান’ ‘ আল্লাহর আইন চাই; সৎ লোকের শাসন চাই’ আবু সাঈদ-মুগ্ধ; শেষ হয়নি যুদ্ধ’ ‘ দিল্লি না ঢাকা; ঢাকা-ঢাকা’ ‘গেলামী না আজাদী; আজাদী-আজাদী, ‘ স্বৈরাচারের আস্তানা; ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’ ‘ফাসি ফাঁসি ফাঁসি চাই; শেখ হাসিনার ফাঁসি চাই’ ‘ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই; খুনী হাসিনার ফাঁসি চাই’ সহ নানাবিধ স্লোগানে রাজপথ প্রকম্পিত করে তোলে।


সেলিম উদ্দিন বলেন, আওয়ামী লীগ আমাদের কষ্টার্জিত স্বাধীনতাকে ব্যক্তিগত, দলীয় ও পৈতৃক সম্পত্তিতে পরিণত করেছিল। তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে মুক্তিযোদ্ধাদের হয়রানি করতেও কসুর করেনি। তারা পরিকল্পিত রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ও নিজেদের আদর্শ বিরোধীদের স্বাধীনতা বিরোধী আখ্যা দিয়ে অপরাজনীতি করেছে। তারা বিরোত্তম খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে রাজাকার বলতে  কসুর করেনি। বাকশালীরা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হয়ে রাজাকারের সাথে জঙ্গী তকমা লাগিয়েছিল। অথচ শেখ হাসিনাই ছিল জঙ্গীবাদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক। তারা নিজেরা রাজাকারের তালিকা করে ১০ হাজার স্কোর অর্জন করে চ্যাম্পিয়ান হয়েছে। তারা নিজেরাই জামায়াতে কোন রাজাকার খুঁজে পায়নি। তাই জঙ্গীবাদের প্রতিভূদের অবিলম্বে বিচারের আওতায় আনতে হবে।


তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধকে রীতিমত ব্যবসায়িক পণ্যে পরিণত করেছে। শেখ হাসিনা দেশের মেধাবীদের রাজাকারের নাতি-পুতি আখ্যা দেওয়ায় সেদিনই তার নৈতিক পতন হয়েছিল। তার উচিত ছিল বাস্তবতা মেনে নিয়ে  পদত্যাগ করা। আল্লামা সাঈদী (রাহি) ফ্যাসীবাদের সম্পর্কে যেসব ভবিষ্যৎবাণী তার সবই বাস্তবে পরিণত হয়েছে। তার কথামত শেখ হাসিনা এখন মামুর বাড়ীতেই অবস্থান করছেন। বিচারপতি মানিক ইঁদুরের গর্ত না পেয়ে কলা পাতায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগ তাদের আদর্শ বিরোধীদের ওপর এমন  কোন নির্যাতন নেই যা তারা করেনি। তারা আমাদেরকে স্বাভাবিক চলাফেরা করতে দেয়নি। নামাজ এবং ইফতার মাহফিল থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এমনকি ঈদের নামাজ পড়াও আমাদের জন্য নিষিদ্ধ ছিল। তাই তাদেরকে লজ্জাজনক পরাজয় বরণ করতে হয়েছে। তিনি আগামী দিনের নেতৃত্বকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ভবিষ্যতে যারা দখলদারী ও স্বৈরাচারি মনোভাব নিয়ে রাজনীতি করতে চান তাদের অবস্থাও শেখ হাসিনার মতই হবে। তাদেরকে ইতিহাসের আস্তাকূঁড়ে নিক্ষিপ্ত হতে হবে।


তিনি আরো বলেন, জামায়াত দেশকে একটি সুখী, সমৃদ্ধ ও কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়। জনগণ জামায়াতের হাতে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব দিলে আমরা ১৮ কোটি মানুষের কাছে রাষ্ট্রের মালিকানা হস্তান্তর করবো। কারণ, জনগণ রাষ্ট্রের প্রকৃত মালিক। আমরা দেশকে এমন এক কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চাই যেখানে কোন অপশাসন-দুঃশাস থাকবে না; থাকবে না কোন বৈষম্য ও দখলদারিত্ব। আমরা জনগণকে দুর্নীতি, লুটপাট, হত্যা, সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যমুক্ত আধুনিক কল্যাণ রাষ্ট্র উপহার দিতে বদ্ধপরিকর। জামায়াত জাতীয় সংসদে সকল শ্রেণি ও মতের মানুষের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে চায়। তারা রাজপথের পরিবর্তে মহান জাতীয় সংসদে তাদের অধিকার ও দাবি-দাওয়া সম্পর্কে কথা বলতে পারবেন। তাদের সকল যৌক্তিক দাবি পূরণ করা হবে। 


মহানগরী আমির বলেন, দেশের মানুষ সকল দলের শাসন দেখেছে। কিন্তু তারা জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হয়েছে। তাই জনগণ এবার জামায়াতে ইসলামীর শাসন দেখার অপেক্ষায় রয়েছে। তাই জামায়াতের নেতাকর্মীদের জনসম্পৃক্ততা বাড়ানোর কোন বিকল্প নেই। তাদেরকে জনগণের সমস্যা চিহ্নিত করে তা সমাধানের যথাসাধ্য চেষ্টা চালাতে হবে। মূলত, মানুষের তৈরি বিধান দিয়ে কখনোই মানুষের কল্যাণ করা সম্ভব নয় বরং এসব মতবাদ মানুষের দুঃখ-দুর্দশা বাড়িয়ে দিয়েছে। তাই আগামী দিনে যারা রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসতে চায় তাদেরকে নির্বাচনী ইসতেহারে আল্লাহর আইনে দেশ পরিচালানা করার প্রতিশ্রুতি দিতে হবে। বাংলাদেশের ওপর কোন শক্তির দাদাগিরি চলবে না। তিনি দেশকে ইসলামী কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত করতে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার আহবান জানান।


thebgbd.com/NA