ঢাকা | বঙ্গাব্দ

স্বাভাবিক ছন্দে ফিরছে সিরিয়া

সিরিয়ায় ‘মানবাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা’ করার ‘ঐতিহাসিক সুযোগ’ বলে মনে করছে মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
  • অনলাইন ডেস্ক | ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৪
স্বাভাবিক ছন্দে ফিরছে সিরিয়া দামেস্কের রাস্তায় সন্তান কোলে এক মা।

যুদ্ধের ধাক্কা কাটিয়ে উঠে স্বাভাবিক ছন্দে ফেরার চেষ্টা শুরু করেছে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে চলা গৃহযুদ্ধের সাক্ষী থাকা পশ্চিম এশিয়ার দেশ সিরিয়া। পুনরায় খুলেছে স্কুল, শুরু হয়েছে পাঠদান। স্কুলমুখী হতে শুরু করেছে দেশটির শিশুরা। রোববার সিরিয়ার বিভিন্ন গির্জাতেও সমবেত প্রার্থনায় যোগ দিয়েছের খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা। এক দিকে যখন ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করছে সিরিয়ার জনজীবন, তখন অন্য দিক থেকে সিরিয়ার উপর একের পর এক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল।


তবে এই মুহূর্তে ইসরায়েলের সঙ্গে কোনও সংঘাতে যেতে চাইছেন না সিরিয়ার বিদ্রোহীরা, সে কথা আগেই জানিয়েছেন বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস)-এর নেতা আবু মুহাম্মদ আল-জোলানি। তারা চাইছেন সিরিয়া পুনর্গঠন করতে। প্রায় তেরো বছর গৃহযুদ্ধের পর সিরিয়ার পরিস্থিতি এখন মোটেই সাভাবিক নয়। তাই নতুন করে কোনও রাষ্ট্রের সঙ্গে সংঘাতের পথে এগোনোর পরিস্থিতিতেও নেই সিরিয়ার বিদ্রোহী গোষ্ঠী।


এই অবস্থায় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সামরিক শক্তি দেখানোর চাইতে কূটনৈতিক সমাধানের পথ খোঁজাই ঠিক বলে মনে করছেন জোলানি। তাই সিরিয়ার পুনর্গঠনের দিকে জোর দেওয়া বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন তিনি। বাশারের আমলে সিরিয়ায় স্বৈরাচারী শাসন কায়েম করার চেষ্টা হয়েছে বলে বার বার অভিযোগ উঠেছে। বিদ্রোহীরা তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকেই আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মঞ্চ এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলির নজর রয়েছে সিরিয়ার দিকে। 


বর্তমান পরিস্থিতি সিরিয়ায় ‘মানবাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা’ করার ‘ঐতিহাসিক সুযোগ’ বলে মনে করছে মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। অ্যামনেস্টির মহাসচিব অ্যাগনেস কালামার্ডের মতে, এই সময়ে ন্যায়বিচার সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ, প্রতিশোধ নয়। কেউ আত্মসমর্পণ করতে চাইছেন বুঝতে পারলে তার উপর যাতে হামলা না করা হয়, সেই অনুরোধও জানিয়েছে অ্যামনেস্টি।


নতুন ক্ষমতায় আসা বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে অন্য দেশগুলির কূটনৈতিক সম্পর্ক কেমন হবে, সে দিকেও নজর রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ার পরিস্থিতির জন্য বাশারকেই দায়ী করেছে। দেশটিতে সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা এবং স্বাধীনতার জন্য সিরিয়ার সব গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হবে বলে জানিয়েছে তারা। চীনও জানিয়েছে, সিরিয়ায় ‘শান্তি’ ফিরবে বলে আশা করছে তারা। বাশারের অন্যতম ‘মিত্ররাষ্ট্র’ ইরান পরিবর্তিত পরিস্থিতিতেও জানিয়েছে, তারা ‘বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে’ আগ্রহী। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিয়ো গুতেরেস বলেছেন, স্থায়ী এবং শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যৎ নির্মাণের জন্য ‘ঐতিহাসিক সুযোগ’ পেয়েছে সিরিয়া।


বিদ্রোহী গোষ্ঠীর নেতা জোলানি সরাসরি ক্ষমতা হাতে নেননি। ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী হিসাবে মহম্মদ আল-বাশিরকে নিয়োগ করেছেন তিনি। রয়টার্স জানিয়েছে, বাশারের পতনের পর নতুন ইসলামিক গোষ্ঠীর কী ভূমিকা থাকবে, তা নিয়ে সংশয়ে ছিলেন সে দেশে বসবাসকারী খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা। তবে রোববার দামেস্কের বাব তৌমার গির্জায় সমবেত প্রার্থনায় যোগ দেন খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা। রয়টার্স জানিয়েছে, বাশার-পতনের পর সে দেশের খ্রিস্টানদের সমবেত প্রার্থনায় যোগদান এই প্রথম।


সূত্র: রয়টার্স


এসজেড