ঢাকা | বঙ্গাব্দ

নিওম প্রকল্প: জমি খালি করতে ‘হত্যার’ নির্দেশ দেয় সৌদি সরকার

দ্য লাইন বা নিওম প্রকল্পের জমি গ্রহণের জন্য কেউ বাধা হয়ে দাঁড়ালে তাকে মেরে ফেলার নির্দেশ ছিল। এমনকি একজন গ্রামবাসীকে গুলি করে হত্যাও করা হয়েছে।
  • | ০৯ মে, ২০২৪
নিওম প্রকল্প: জমি খালি করতে ‘হত্যার’ নির্দেশ দেয় সৌদি সরকার দ্রুত এগুচ্ছে নিওম প্রকল্পের কাজ

দ্য লাইন নামে পরিচিত নিওম প্রকল্প বাস্তবায়নে জমি খালি করার ক্ষেত্রে কেউ বাঁধা দিলে তাকে মেরে ফেলতে সংশ্লিষ্ট নিরাপত্তা বাহিনীকে অনুমতি দেয় সৌদি সরকার।

সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের স্বপ্নের নিওম শহরের জন্য বিভিন্ন জায়গায় উচ্ছেদ অভিযান চালানো হচ্ছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে কর্নেল রাবিহ আলেনেজি নামের এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তাকে গ্রামবাসীকে উচ্ছেদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। সঙ্গে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, যারা শহরের জন্য জায়গা ছেড়ে দেবেন না, তাদের বিরুদ্ধে যেন গুলি করাসহ অন্যান্য মারণাস্ত্র ব্যবহারর করা হয়।

কর্নেল রাবিহ ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে এ তথ্য জানিয়েছে বলে বৃহস্পতিবার (৯ মে) প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়।

সৌদি আরবের ওই এক সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, দ্য লাইন বা নিওম প্রকল্পের জমি গ্রহণের জন্য কেউ বাধা হয়ে দাঁড়ালে তাকে মেরে ফেলার নির্দেশ ছিল। এমনকি একজন গ্রামবাসীকে গুলি করে হত্যাও করা হয়েছে।

গত বছর যুক্তরাজ্যে নির্বাসনে চলে যান কর্নেল আলেনেজি। মূলত সেখানে থাকার কারণেই তিনি এ তথ্য প্রকাশ করতে পেরেছেন।

এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, দ্য লাইন থেকে সাড়ে ৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত একটি গ্রাম আল-খুরাইবাহের বাসিন্দাদের সেখান থেকে চলে যেতে বলা হয়। এই গ্রামটির বাসিন্দারা হুওয়াইতাত গোত্রের সদস্য।

আলেনেজি বলেন, ‘২০২০ সালের এপ্রিল মাসের এক আদেশে বলা হয়, হুওয়াইতাত গোত্রটি বিদ্রোহীদের নিয়ে গঠিত এবং যে কেউ (দ্য লাইনের জন্য জমি অধিগ্রহণের) বিরোধিতা করলে তাকে হত্যা করতে হবে।’

তিনি বিবিসিকে বলেছেন, “মোহাম্মদ সালমানের চিন্তার মূল বিষয় হলো নিওম শহর। এ কারণে হুয়াইতাত গোত্রের সঙ্গে এমন নির্মমতা করেছেন তিনি।”

এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, এটি মূলত জমি অধিগ্রহণের জন্য মানুষ মারার ছাড়পত্র ছিল। তবে শারীরিক অসুস্থতার অজুহাত দিয়ে আলেনেজি নিজে সেই মিশনে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকেন।

আলেনেজির দেওয়া তথ্য অনুসারে, আব্দুল রহিম আল-হুওয়াইতি দ্য লাইন প্রকল্পের জন্য গঠিত কমিটিকে তার জমি রেজিস্ট্রি করা থেকে বাধা দেন। তার একদিন পরই তাকে গুলি করে হত্যা করা হয় এবং গ্রামটি উচ্ছেদ করা হয়।

অবশ্য, সৌদি নিরাপত্তা বাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়, হুওয়াইতিরা তাদের ওপর গুলি ছুড়লে জবাবে তারাও পাল্টা গুলি করে। আর সেই গুলিতেই আব্দুল রহিম মারা যান।

এ বিষয়ে সৌদি সরকার ও নিওম কর্তৃপক্ক কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

দেশটির যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ২০৩০ সালের মধ্যে ৫০০ বিলিয়ন ডলারে এই শহরটি তৈরির পরিকল্পনা করছেন।

বিলাসবহুল এই প্রকল্পটি হবে ২০০ মিটার (৬৫৬ ফুট) চওড়া এবং লম্বায় হবে ১৭০ কিমি (১০৬ মাইল)। তবে ২০৩০ সালের মধ্যে মাত্র ২ দশমিক ৪ কিমি শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বিশ্বের অন্যান্য শহর থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন হবে নিওম শহর। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ১৭০ কিলোমিটার লম্বা এই শহরটির প্রশস্ত হবে মাত্র ২০০ মিটার। এতে কোনো গাড়ি থাকবে না। তবে ২০৩০ সালের মধ্যে শহরটি পুরোপুরি নির্মাণ সম্ভব হবে না। ধারণা করা হচ্ছে, এই সময়ের মধ্যে ২ দশমিক ৪ কিলোমিটার অংশ তৈরি করা যাবে।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, এই শহরের জন্য ৬ হাজার মানুষ অন্যত্র সরে গেছেন। যদিও বাস্তবে এই সংখ্যা অনেক বেশি বলে ধারণা করা হয়।

বিবিসি স্যাটেলাইটের তিনটি ছবি প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যাচ্ছে শহরের জন্য আল-খুরাইবাহ, শার্মা এবং গায়াল নামের তিনটি গ্রাম ধ্বংস করা হয়েছে। এসব গ্রামে থাকতেন হুয়াইতাত গোত্রের মানুষ।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, প্রিন্স সালমান শহরটিতে ১০টি প্রাসাদ নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছেন। যেগুলোর একেকটি ফুটবল মাঠের চেয়ে বড় হবে। এছাড়া এই শহরের প্রত্যেকটি বাড়ি ৪০০ মিলিয়ন ডলারে বিক্রি করা হবে।

সূত্র: বিবিসি