এটি কেবলমাত্র একটি পারিবারিক বন্ধন নয়; বরং এটি মহানবী (সা.)-এর জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ মোড় এবং ইসলামের প্রাথমিক দিকগুলোর উন্নতিতে এক বড় ভূমিকা পালন করেছে। বিবি খাদিজা (রা.) ছিলেন একজন প্রজ্ঞাবান, সফল ব্যবসায়ী এবং সমৃদ্ধ চরিত্রের অধিকারী, যিনি মহানবী (সা.)-এর জীবনের সবচেয়ে বিশ্বস্ত সঙ্গী হয়ে উঠেছিলেন।
বিবি খাদিজা (রা.): পরিচিতি
বিবি খাদিজা (রা.) ছিলেন কুরাইশ বংশের অভিজাত পরিবারের একজন সম্ভ্রান্ত নারী। তাঁর পিতা খুয়ায়লিদ ইবনে আসদ ছিলেন একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি। খাদিজা (রা.) ছিলেন অত্যন্ত প্রজ্ঞাবান ও সজ্জন এবং তিনি নিজ মেধা ও সততার মাধ্যমে ব্যবসায়িক খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। তিনি "তাহিরা" বা "পবিত্র" উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলেন।
বিবি খাদিজা (রা.) মক্কার অন্যতম সফল ব্যবসায়ী ছিলেন। তিনি বাণিজ্যের জন্য দূরদূরান্তে কাফেলা পাঠাতেন এবং তাঁর ব্যবসা পরিচালনার জন্য দক্ষ ও বিশ্বস্ত লোকদের নিয়োগ করতেন।
মুহাম্মদ (সা.)-এর সঙ্গে পরিচয়
যুবক মুহাম্মদ (সা.) তাঁর সততা, সত্যবাদিতা এবং চরিত্রের জন্য মক্কায় পরিচিত ছিলেন। তাঁকে "আল-আমিন" বা "বিশ্বস্ত" উপাধিতে সম্মানিত করা হয়েছিল। খাদিজা (রা.) তাঁর ব্যবসার পরিচালনার জন্য একজন বিশ্বস্ত ও দক্ষ ব্যক্তিকে খুঁজছিলেন। তখন তিনি মুহাম্মদ (সা.)-কে একটি বাণিজ্য কাফেলার নেতৃত্ব দেওয়ার প্রস্তাব দেন।
বাণিজ্যের সাফল্য
মুহাম্মদ (সা.) খাদিজার (রা.) পণ্য নিয়ে সিরিয়া সফরে যান এবং অত্যন্ত সফলভাবে ব্যবসা পরিচালনা করেন। খাদিজার (রা.) দাস মাইসারা এই সফরে মুহাম্মদ (সা.)-এর সততা, বিচক্ষণতা এবং ন্যায়ের বিষয়গুলো বিবি খাদিজাকে জানান। এই ঘটনার মাধ্যমে খাদিজা (রা.) মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা অনুভব করেন।
বিয়ের প্রস্তাব এবং সম্পর্কের সূচনা
বিবি খাদিজা (রা.) নিজেই মুহাম্মদ (সা.)-কে বিয়ের প্রস্তাব দেন, যা সে সময়ের আরব সমাজে একটি বিরল ঘটনা ছিল। তিনি তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু নাফিসার মাধ্যমে মুহাম্মদ (সা.)-এর কাছে এই প্রস্তাব পৌঁছান। মুহাম্মদ (সা.) এই প্রস্তাবে সম্মতি জানান এবং উভয় পরিবারের সম্মতিতে তাঁদের বিয়ে সম্পন্ন হয়।
বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা
বিবি খাদিজার (রা.) জন্য নির্ধারিত হয়েছিল একটি বড় মহর। উভয় পরিবারের সদস্য ও কুরাইশ নেতৃবৃন্দ বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন। বিয়ের সময় মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন ২৫ বছর বয়সী, আর খাদিজা (রা.) ছিলেন ৪০ বছরের।
বিবি খাদিজা (রা.)-এর ভূমিকা
মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনে খাদিজা (রা.) ছিলেন এক অপরিহার্য সঙ্গী। তিনি কেবল স্ত্রী নন; বরং একজন মেন্টর, সহযোগী এবং প্রেরণার উৎসও ছিলেন।
সমর্থন এবং সাহচর্য
নবুওয়াতের প্রাথমিক সময় মুহাম্মদ (সা.) যখন দুঃশ্চিন্তা ও কষ্টের মধ্যে ছিলেন, তখন খাদিজা (রা.) তাঁকে সর্বাধিক মানসিক এবং অর্থনৈতিক সমর্থন দেন।
তিনি মহানবী (সা.)-এর প্রথম অনুসারী এবং ইসলামের প্রথম মুসলিম নারী ছিলেন।
অর্থনৈতিক সহায়তা
মুহাম্মদ (সা.)-এর নবুওয়াত প্রচারে খাদিজা (রা.) তাঁর সম্পদ উত্সর্গ করেছিলেন। এই সহায়তা ইসলামের প্রাথমিক প্রচার ও বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।
মুহাম্মদ (সা.) ও খাদিজা (রা.)-এর বিয়ে কেবল একটি পারিবারিক সম্পর্ক নয়; এটি ছিল পারস্পরিক শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, এবং দায়িত্ববোধের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। খাদিজা (রা.)-এর জীবন ও তাঁর অবদান আজও মুসলিম উম্মাহর জন্য প্রেরণার উৎস। তাঁদের এই সম্পর্ক ইতিহাসে এক অনন্য স্থান দখল করে রেখেছে, যা সমস্ত দাম্পত্য সম্পর্কের জন্য এক অনুসরণীয় আদর্শ।
thebgbd.com/AR