ঢাকা | বঙ্গাব্দ

শেখ হাসিনার সব অপকর্মের সঙ্গী ছিল ভারত : রিজভী

রাজশাহী জেলা পরিষদ মিলনায়তনে ওলামা দলের রাজশাহী বিভাগীয় কর্মী সমাবেশে বক্তব্য দেন অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
  • নিজস্ব প্রতিবেদক | ২৮ ডিসেম্বর, ২০২৪
শেখ হাসিনার সব অপকর্মের সঙ্গী ছিল ভারত : রিজভী সংগৃহীত

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, বাংলাদেশকে একজন নিষ্ঠুর দানব সরকার, একজন মহিলা ফেরাউন শাসন করেছে। কিন্তু পাশের দেশ ভারত ছাড়া আর কোনো রাষ্ট্র শেখ হাসিনাকে সমর্থন দেয়নি। বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্ন করা, কথা বলার অধিকারকে হরণ করা, গণতন্ত্রের সব প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে শিকড় থেকে উপড়ে ফেলাসহ যে অন্যায়গুলো শেখ হাসিনা করেছে, প্রত্যেকটির সঙ্গে ভারত সঙ্গী ছিল।



শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজশাহী জেলা পরিষদ মিলনায়তনে ওলামা দলের রাজশাহী বিভাগীয় কর্মী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।





অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেন, রাষ্ট্রকে অপরাধী বানিয়েছে শেখ হাসিনা। এই অপরাধের দোসর ছিল আরেকটি রাষ্ট্র, ভারত। শেখ হাসিনার সব অপরাধ, সব গুম-খুন-হত্যাকে সমর্থন দিয়েছিল, এই দুষ্কর্মে তারা সফল হয়েছিল। মাওলানা সাঈদী সাহেবের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছিল, সে অভিযোগ যে মিথ্যা সেটা আদালতে বলার জন্য সুখরঞ্জন বালি গিয়েছিলেন। তিনি হিন্দু মানুষ, কিন্তু সত্য ও ন্যায়ের জন্য দাঁড়িয়েছিল। মাওলানা সাঈদী সাহেব কখনোই মানুষ হত্যা করেনি, সংখ্যালঘুদের হত্যা করার সঙ্গে তিনি জড়িত ছিলেন না, সে কথাটি আদালতে বলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সাদা পোশাকধারী পুলিশ তাকে তুলে নিয়ে কোথায় রাখা হয়েছিল কেউ জানে না। ৫ বছর পর জানা গেল সুখরঞ্জন বালি ভারতের একটি কারাগারে বন্দি ছিলেন।



অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, জুলাই-আগস্টের মহাবিপ্লবের পর প্রত্যেকেই ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সমর্থন দিয়েছে। তার ওপর আস্থা রেখে তাকে এ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বানিয়েছে। কিন্তু জনপ্রত্যাশা ও জন-আকাঙক্ষার বাইরে গিয়ে অন্য এজেন্ডা নিয়ে কাজ করলে মানুষ এটি মেনে নিবে না। এখনো চাল, ডালের দাম কমেনি। গত দুদিনে সোনালি মুরগির দাম কেজিতে ৩০ টাকা বেড়েছে। আলু আমাদের এখানেই উৎপাদন হয়। আলুর মৌসুমে ৩/৪ টাকা কেজি ছিল। শেখ হাসিনার কারণে গত মৌসুমে ভারত থেকে আলু আমদানি করতে হয়েছে। এবারও যদি আলু আমদানি করতে হয়, কেজি যদি ৭৫/৮০ টাকা হয় তাহলে মানুষ বলবে যে, ড. ইউনূস সরকারকে সমর্থন দিয়ে আমাদের কী লাভ হলো।





বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, কেউ কেউ বলছেন, আনুপাতিক হারে নির্বাচনের কথা। কেন, আনুপাতিক নির্বাচন কীসের জন্য, এটি কি মানুষ বুঝে? তৃণমূলের মানুষ বুঝে যে, আনুপাতিক কী? তাহলে এই সরকার যে সংস্কারের কথা বলছে, এটি তো সংস্কার হলো না। একটি রাজনৈতিক দলকে মানুষ ভোট দেবে এবং সেই দল ঠিক করবে যে, কাকে কাকে কী বানাবে। তাহলে তো কেনা-বেচা আরও শুরু হবে। সে কারণে দুই-একটি রাজনৈতিক দল আনুপাতিক নির্বাচনের কথা বলছে। কিন্তু একজন ব্যক্তি নিজের কিংবা দলের কারণে তার জনপ্রিয়তা থাকতে পারে। দুটি মিলেই একজন ব্যক্তি বিজয়ী হয়। তাই একজন ভোটার তার পছন্দের ব্যক্তিকে ভোট দিবে, এই ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়ার অধিকার কারও নেই। তারা বলবে, পৃথিবীর অন্যান্য দেশে তো দৃষ্টান্ত আছে। হ্যাঁ, আছে কিন্তু সেই দেশগুলোও আনুপাতিক নির্বাচন থেকে সরে আসার কথা বলছে।



রাকসুর সাবেক এ ভিপি বলেন, গত ১৫ বছর ছাত্র-যুবকরা গুম হয়েছে, নদী-নালা খাল-বিলের পাশে আমরা ক্রসফায়ারের পর অনেক লাশ পড়ে থাকতে দেখেছি। গণতন্ত্রকে নির্বাসনে পাঠানো হয়েছিল। কথা বলার স্বাধীনতা ছিল না, যে কথা বলবে তার জন্য গুম-খুন ও জুলুমের একটি অনুষঙ্গ করে রেখেছিল শেখ হাসিনা। আলেম-ওলামারা সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত হয়েছে। সেই আওয়ামী সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আলেম-ওলামাদের ধরার জন্য মসজিদের ভেতরে বুট জুতা পরে ঢুকে মসজিদকে অপমানিত করেছে।



তিনি বলেন, হেফাজতের সেই সমাবেশে রাতের আঁধারে লাইট-বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে বৃষ্টির মতো গুলি করে কত আলেম-ওলামাকে হত্যা করেছে, তার হিসাব এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। শেখ হাসিনার পুলিশের কর্মকর্তারা বুক উঁচিয়ে বলতো, আমরা যেভাবে হেফাজতকে সামলিয়েছি, প্রয়োজন হলে আমরা আবারও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যে কোনো আন্দোলনকে সামলাব। সামলাবেন কীভাবে; হত্যা করে, রক্ত ঝরিয়ে, রাজপথে রক্তের আলপনা এঁকে আপনারা সামাল দেবেন?



বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ওলাম দলের কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক আলহাজ কাজী মাওলানা সেলিম রেজার সভাপতিত্বে কর্মী সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন- বিএনপির চেয়ারপার্সনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক (রাজশাহী বিভাগ) অ্যাডভোকেট সৈয়দ শাহীন শওকত খালেক।



অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপির ধর্মবিষয়ক সম্পাদক মো. রফিকুল ইসলাম জামাল ও বিশেষ বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ওলামা দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট কাজী মাওলানা মো. আবুল হোসেন। এ সময় ওলামা দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী মাওলানা মো. আলমগীর হোসেন ও আলহাজ কারী মাওলানা গোলাম মোস্তফা বক্তব্য দেন।



কর্মিসভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিতি ছিলেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এরশাদ আলী ঈশা, সদস্য সচিব মানুন-অর-রশিদ মামুন ও জেলার সদস্য সচিব বাবু বিশ্বনাথ সরকার।




thebgbd.com/AR