যুক্তরাষ্ট্র যদি অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করে দেয়, তাহলেও লক্ষ্য পূরণ হওয়ার আগ পর্যন্ত গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। বৃহস্পতিবার ইসরায়েলের রাজধানী জেরুজালেমে জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে এ ইস্যুতে ইসরায়েলের অবস্থান স্পষ্ট করেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (৯ মে) এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ইসরায়েল ‘একা দাঁড়াতে পারে’। রাফায় বড় ধরনের সামরিক অভিযান চালালে বাইডেন প্রশাসন ইসরায়েলকে সামরিক সহায়তা বন্ধ করার হুমকির প্রতিক্রিয়ায় নেতানিয়াহু এই মন্তব্য করেন।
টেলিভিশনে সম্প্রচারিত সেই ভাষণে নেতানিয়াহু বলেন, ‘যদি একা দাঁড়াতে হয়, তাহলে আমরা একাই দাঁড়াব। যদি প্রয়োজন হয়, আমরা একা অগ্রসর হব…এবং আমি বলছি— যদি আর কিছুই না থাকে, তাহলে আমাদের প্রয়োজনে আমরা আমাদের হাতের নখ দিয়ে লড়াই করব। কিন্তু আমরা জানি আমাদের আঙুলের নখের চেয়ে অনেক বেশি কিছু আছে।’
৭ অক্টোবর গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাস এবং তাদের মিত্রগোষ্ঠী প্যালেস্টাইনিয়ান ইসলামিক জিহাদের (পিআইজে) যোদ্ধাদের অতর্কিত হামলার জবাবে ওই দিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েল; আর এই যুদ্ধের শুরু থেকে ইসরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহ করে আসছে বিশ্বের একমাত্র এই ইহুদি রাষ্ট্রের সবচেয়ে পুরোনো ও বিশ্বস্ত মিত্র যুক্তরাষ্ট্র। এমনকি এ ইস্যুতে এতদিন আন্তর্জাতিক জনমতও উপেক্ষা করেছে ওয়াশিংটন।
অস্ত্র সরবরাহের পাশাপাশি ৭ মাসে ইসরায়েলকে বিভিন্ন নির্দেশনাও দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সেসবের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দু’টি নির্দেশনা ছিল (ক) গাজায় নিরপরাধ বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের হতাহতের হার হ্রাস করা এবং (খ) আরও দক্ষ ও নিখুঁতভাবে অভিযান পরিচালনা করা।
কিন্তু এসব নির্দেশনার কোনোটিতেই ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন সরকার কিংবা প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) কর্ণপাত করেনি। ফলে দুই দেশের কর্মকর্তাদের সম্পর্ক স্বাভাবিকভাবেই খানিকটা জটিল হয়ে ওঠে গত কয়েক মাসে।
এই জটিলতা প্রথম স্পষ্টভাবে প্রকাশিত হয় এপ্রিলে, যখন নেতানিয়াহু প্রথম গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় সীমান্ত শহর রাফাহতে সামরিক অভিযান চালানোর পরিকল্পনা ব্যক্ত করেন। যুক্তরাষ্ট্র এতে প্রবল আপত্তি জানায়। কারণ, ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযান শুরুর পর থেকে নিরাপত্তার জন্য লাখ লাখ ফিলিস্তিনি রাফায় আশ্রয় নেওয়া শুরু করেন। এই ফিলিস্তিনিদের সবাই বেসামরিক।
প্রায় এক মাস এই নিয়ে ওয়াশিংটনের সঙ্গে টানাপোড়েনের পর গত সপ্তাহে রাফায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী; আর এই অভিযান শুরুর প্রায় সঙ্গে সঙ্গে ইসরায়েলে অস্ত্র সরবরাহ স্থগিত করে ওয়াশিংটন।
বুধবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বাইডেন স্পষ্টভাবে বলেন, ‘যদি তারা রাফাহতে অগ্রসর হয়, সেক্ষেত্রে নিশ্চিতভাবেই সেই অভিযানের জন্য অস্ত্র সরবরাহ করব না।’
বাইডেনের এই সাক্ষাৎকারের পরের দিন দেওয়া সেই ভাষণে ১৯৪৭ সালে ইসরয়েলের প্রতিষ্ঠাকাল স্মরণ করেন নেতানিয়াহু। তিনি বলেন, ‘আজ থেকে ৭৬ বছর আগে আমরা খুবই অল্প ছিলাম, কিন্তু অনেকের সঙ্গে লড়াই করে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। সে সময় আমাদের কাছে পর্যাপ্ত অস্ত্র ছিল না, আন্তর্জাতিক নিষেধজ্ঞাও ছিল।’
‘কিন্তু একতা, বীরত্ব ও স্পিরিটের মাধ্যমে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। এবারের লড়াইয়েও আমরাই জিতব।’
নেতানিয়াহুর সাম্প্রতিক মন্তব্য এবং গাজায় তাদের অব্যাহত হামলায় ইসরায়েল- যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন আরও বাড়বে।
হোয়াইট হাউস বলেছে— রাফাহতে বড় হামলা চালালেই যে হামাসকে পরাজিত করা সম্ভব হবে, তা নাও হতে পারে। বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউস মুখপাত্র জন কিরবি এক ব্রিফিংয়ে বলেন, বাইডেনের দৃষ্টিতে রাফায় হামলা চালালেই ইসরায়েলের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূরণ হবে তা নয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের মধ্যে রাফা নিয়ে কথোপকথন এখনও চলছে বলে যোগ করেন কিরবি।
কিরবির সর্বশেষ মন্তব্য এসেছে যখন বাইডেন এবং অন্যান্য মার্কিন কর্মকর্তারা বারবার রাফাহতে সামরিক অভিযানের নিন্দা জানিয়েছেন। এই হামলা কেবল গাজায় মানবিক সংকট আরও তীব্র করবে বলে মনে করেন তারা।
সূত্র : বিবিসি