ঢাকা | বঙ্গাব্দ

খেলাপি ঋণের তথ্য গোপন রাখা হবে না: কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুখপাত্র

খেলাপি ঋণের পরিমাণ চার লাখ কোটি টাকা বলে ধরা হলেও সম্পূর্ণ তথ্য সামনে এলে এটি ছয় লাখ কোটি টাকা ছাড়াতে পারে।
  • নিজস্ব প্রতিবেদক | ০৮ জানুয়ারি, ২০২৫
খেলাপি ঋণের তথ্য গোপন রাখা হবে না: কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুখপাত্র ফাইল ছবি

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা বলেছেন, আগে খেলাপি ঋণের তথ্য গোপন রাখা হতো, কিন্তু এখন সব তথ্য প্রকাশ্যে আনার চেষ্টা চলছে। তিনি জানান, খেলাপি ঋণের পরিমাণ চার লাখ কোটি টাকা বলে ধরা হলেও সম্পূর্ণ তথ্য সামনে এলে এটি ছয় লাখ কোটি টাকা ছাড়াতে পারে। এ বিষয়ে ব্যাংকগুলোতে তদন্ত শেষে খেলাপি ঋণ কমানোর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। এখন খেলাপি ঋণ কম দেখানোর কোনো প্রচেষ্টা নেই।


গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে চলার চেষ্টা করা হচ্ছে, যা খেলাপি ঋণ বাড়ার অন্যতম কারণ। তবে তথ্য লুকানোর পরিবর্তে সবকিছু প্রকাশ করার নীতিই গ্রহণ করা হয়েছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নীতি সুদহার একাধিকবার বাড়ানোর পরও পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। জানুয়ারিতে মূল্যস্ফীতি না কমলে আবারও সুদহার বাড়ানো হতে পারে। যদিও এ কারণে ব্যবসায়ীরা অসন্তুষ্ট, কারণ ঋণে অতিরিক্ত সুদের বোঝা চাপছে। বিনিয়োগের ধীরগতি নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তিনি। শুধু সুদের হার নয়, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, জ্বালানি সরবরাহ, এবং যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের মতো বিষয়গুলো বিনিয়োগের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত।


গত পাঁচ মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকের বোর্ড পুনর্গঠন, ব্যাংকিং টাস্কফোর্স গঠন, ডলারবাজার স্থিতিশীল করা, এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। যদিও কিছু সুফল পাওয়া গেছে, আর্থিক খাত এখনো পুরোপুরি স্থিতিশীল হয়নি। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতার জন্য কাজ অব্যাহত রয়েছে। মুখপাত্র জানান, আর্থিক ভীতি কেটে গেলেও এখনো চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে।


সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মুখপাত্র বলেন, ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ কোন ব্যাংকের মাধ্যমে কত টাকা কোন দেশে পাচার হয়েছে, তা জানা যাবে। পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনার প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ এবং নির্ধারিত সংস্থাগুলো এ নিয়ে কাজ করছে। নিরাপত্তার কারণে তারা এসব তথ্য প্রকাশ করে না।


বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি তলানিতে নেমে এসেছে। গত নভেম্বর মাসে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ৭.৬৬ শতাংশে নেমে আসে, যা সাড়ে তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। রাজনৈতিক অস্থিরতা, জালিয়াতি, এবং দুর্বল ব্যাংকগুলোর ঋণ প্রদান বন্ধ থাকায় এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এসব ব্যাংক আমানতকারীদের চাহিদা মেটাতেই হিমশিম খাচ্ছে। ঋণের চাহিদা কমে যাওয়ায় ব্যাংকগুলো সরকারি ট্রেজারি বিল ও বন্ডে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে, যা তাদের জন্য বেশি লাভজনক। কারণ বন্ডে ঝুঁকিমুক্ত মুনাফা নিশ্চিত থাকে, যেখানে ঋণে খেলাপি হওয়ার ঝুঁকি থাকে।


২০২৪ সালের নভেম্বরে বেসরকারি খাতের ঋণে প্রবৃদ্ধি ছিল ৭.৬৬ শতাংশ, যা ২০২১ সালের মে মাসের পর সর্বনিম্ন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯.৮ শতাংশ, যা অর্জিত হয়নি। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর পরিচালন মুনাফা অবশ্য ২০২৪ সালে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি দেখিয়েছে, যা ইতিহাসে সর্বোচ্চ।


thebgbd.com/NIT