ঢাকা | বঙ্গাব্দ

৬৫ পণ্যে ভ্যাট, কমবে ক্রয়ক্ষমতা

অর্থবছরের মাঝামাঝি সময়ে ৬৫টি পণ্যে ভ্যাট বাড়ানোর সিদ্ধান্তে ব্যবসায়ীরা বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ হয়েছেন।
  • নিজস্ব প্রতিবেদক | ০৮ জানুয়ারি, ২০২৫
৬৫ পণ্যে ভ্যাট, কমবে ক্রয়ক্ষমতা সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চাপে অর্থবছরের মাঝামাঝি সময়ে ৬৫টি পণ্যে ভ্যাট বাড়ানোর সিদ্ধান্তে ব্যবসায়ীরা বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ হয়েছেন। ওষুধ, গুঁড়া দুধ, বিস্কুট, জুস, ফলমূল, সাবান, মিষ্টি ইত্যাদির মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে ভ্যাট বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে অংশীজনদের সঙ্গে পূর্ব আলোচনা ছাড়াই। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ সিদ্ধান্ত মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমিয়ে দেবে এবং শিল্প খাতে নতুন চাপ তৈরি করবে।


চলতি অর্থবছরের মাঝপথে হঠাৎ ভ্যাট, সম্পূরক শুল্কসহ বিভিন্ন কর বাড়িয়ে রাজস্ব বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এ উদ্যোগের অংশ হিসেবে তৈরি পোশাক, মিষ্টি, এসি রেস্তোরাঁ, নন-এসি হোটেলসহ ৬৫টি পণ্য ও সেবায় ভ্যাট ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ইতোমধ্যে এ প্রস্তাব নীতিগতভাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।


বর্তমানে ভ্যাট নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা পাঁচ লাখ ২৫ হাজার। এর মধ্যে নিয়মিত ভ্যাট দেন সাড়ে তিন লাখ প্রতিষ্ঠান। যদিও লাখ লাখ প্রতিষ্ঠান এখনও ভ্যাটের আওতার বাইরে রয়ে গেছে। ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে এমন সিদ্ধান্ত ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়াবে।


রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান বলেছেন, রেস্তোরাঁ খাতে ভ্যাট তিন গুণ বাড়ানো হলে ব্যবসায় ভয়াবহ প্রভাব পড়বে। ভ্যাট বৃদ্ধির পাশাপাশি আয়করও বাড়বে। এতে নিয়ম মেনে ব্যবসা পরিচালনাকারীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।


পোশাক খাতেও ভ্যাট বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে পোশাকের আউটলেটে সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট কার্যকর রয়েছে, যা দ্বিগুণ করে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। একইভাবে মিষ্টির ওপর ভ্যাট সাড়ে ৭ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।


বাংলাদেশ ফ্যাশন উদ্যোক্তা সমিতির সভাপতি আজহারুল হক আজাদ ভ্যাট বৃদ্ধির পরিবর্তে ভ্যাটের আওতা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। অন্যদিকে, মিষ্টি উৎপাদক সমিতির সাবেক সভাপতি মাধব চন্দ্র ঘোষ বলেছেন, ভ্যাটের হার কমালে মানুষ স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে এবং ভ্যাট আদায় বাড়ে।


এ ছাড়া উৎপাদন পর্যায়ে বিস্কুট, আচার, টিস্যু পেপার, ম্যাট্রেস, এবং ট্রান্সফরমারের মতো পণ্যে ভ্যাট বৃদ্ধির পরিকল্পনা রয়েছে। আকাশপথে ভ্রমণ, ড্রাইভিং লাইসেন্স কার্ড তৈরির খরচ এবং মদের বিলের ওপর সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে।


বার্ষিক লেনদেন ৫০ লাখ টাকা ছাড়ালেই টার্নওভার কর বসানোর প্রস্তাবও করা হয়েছে, যা আগে ৫০ লাখ থেকে তিন কোটি টাকার মধ্যে কার্যকর ছিল। ফলে ছোট ও মাঝারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপরও নতুন করের বোঝা চাপবে।


সিপিডি’র বিশেষ ফেলো ড. মুস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময়ে ভ্যাট বৃদ্ধি একটি বড় চাপ তৈরি করবে। বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের জন্য এটি কঠিন হয়ে উঠবে। তাঁর মতে, পরোক্ষ কর বৃদ্ধির পরিবর্তে প্রত্যক্ষ কর বৃদ্ধির মাধ্যমে রাজস্ব বাড়ানো উচিত ছিল।


thebgbd.com/NIT