‘গদি’তে বসার আগেই ‘চাপের কূটনীতির’ রাস্তায় হাঁটতে শুরু করেছেন নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মঙ্গলবার মেক্সিকো উপসাগরের নাম বদলে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন তিনি! এরপর জানালেন, বাণিজ্যিক এবং ভৌগোলিক পরিসর বাড়াতে পানামা খাল ও গ্রিনল্যান্ড কিনতে চান তিনি। পাশাপাশি, ওয়াশিংটনের স্বার্থ পরিপন্থী কোনও আচরণ না করার জন্য হুঁশিয়ারি দিলেন কানাডাকেও!
‘তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে’ স্বার্থরক্ষায় প্রয়োজনীয় সামরিক শক্তি প্রয়োগের সম্ভাবনার পথও খোলা রাখার কথা ঘোষণা করেছেন ট্রাম্প। নিজ বাসভবনে সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন করা হয়, ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট পদের দায়িত্ব নেওয়ার পরে পানামা এবং গ্রিনল্যান্ডের ক্ষেত্রে সামরিক ও অর্থনৈতিক বলপ্রয়োগ করবেন না, বিশ্বকে এমন নিশ্চয়তা দিতে পারবেন কি না। জবাবে রিপাবলিকান নেতা বলেন, ‘না, ওই দুটি ক্ষেত্রের কোনওটির বিষয়েই কোনও নিশ্চয়তা দিতে পারব না। তবে এটা বলতে পারি, অর্থনৈতিক নিরাপত্তার জন্য আমাদের ওই দুটিকেই (পানামা খাল এবং গ্রিনল্যান্ড) প্রয়োজন।’
প্রেসিডেন্ট পদে প্রথম মেয়াদেই দেশের পরিসর বাড়াতে কানাডার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত বিশ্বের বৃহত্তম দ্বীপ গ্রিনল্যান্ডকে কিনতে চান ট্রাম্প। কিন্তু ওই ‘স্বশাসিত’ দ্বীপের উপর ইউরোপীয় দেশ ডেনমার্কের অধিকার আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত। কয়েক মাস আগে ট্রাম্প সমাজমাধ্যমে লিখেন, ‘সারা বিশ্বের নিরাপত্তা এবং স্বাধীনতার স্বার্থে যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, গ্রিনল্যান্ডের মালিকানা এবং নিয়ন্ত্রণ এই মুহূর্তে অপরিহার্য।’ পত্রপাঠ সেই দাবি খারিজ করে ডেনমার্ক। কিন্তু এ বার সরাসরি বলপ্রয়োগের বার্তা এল হোয়াইট হাউসের পরবর্তী বাসিন্দার পক্ষ থেকে।
অন্য দিকে, বিশ্ববাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ জলপথ হল পানামা খাল। গত শতকের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রই প্রশান্ত এবং আটলান্টিক মহাসাগরের সংযোগরক্ষাকারী এই খালটি খনন করে। তাদের হাতেই পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ ছিল। পরে ১৯৯৯ সালে মধ্য আমেরিকার দেশ পানামার হাতে পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ তুলে দেয় ওয়াশিংটন। কিন্তু এখন ট্রাম্পের দাবি মেনে দখল ছাড়তে রাজি নয় পানামা। সে দেশের প্রেসিডেন্ট হ্যাভিয়ের মার্টিনেজ আচা বলেন, ‘শুধু পানামার জনগণের হাতে এই খালের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে এবং তাদের হাতেই এই খালের নিয়ন্ত্রণ থাকবে।’
ট্রাম্প আরও বলেন, আমরা মেক্সিকো উপসাগরের নাম পরিবর্তন করে আমেরিকা উপসাগর (আমেরিকান বে) করতে যাচ্ছি। যেখানে একটি সুন্দর বলয় রয়েছে। অনেকগুলি অঞ্চলকে ছুঁয়ে থাকা এই উপসাগরের উপযুক্ত নাম ‘আমেরিকা উপসাগর’। ‘সঠিক সময়ে’ তার প্রশাসন মেক্সিকো উপসাগরের নাম পরিবর্তনের জন্য পদক্ষেপ করবে বলেও ঘোষণা করেন রিপাবলিকান নেতা। প্রেসিডেন্ট পদে প্রথম মেয়াদে মেক্সিকো থেকে আগত ‘অবৈধ অভিবাসী’দের ঠেকাতে সীমান্তে বেড়া বসানোর কাজ শুরু করেন ট্রাম্প। মঙ্গলবারের সাংবাদিক বৈঠকেও প্রতিবেশি দেশের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘ওটা (মেক্সিকো) একটা বিপজ্জনক দেশ।’
অন্য দিকে উত্তরের প্রতিবেশী কানাডার সঙ্গে সামরিক সহায়তা এবং বাণিজ্য ঘাটতি নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করে ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা ভাল প্রতিবেশী ছিলাম। কিন্তু তা চিরকাল তো চলতে পারে না।’ এমনকি, যুক্তরাষ্ট্র যদি কানাডার দখল করে নেয়, তা হলেও ‘গুরুতর কিছু হবে না’ বলে জানান তিনি।
সূত্র: স্কাই নিউজ
এসজেড