ফেসবুকে দেশের এক শীর্ষ বিচারপতিকে নিয়ে সমালোচনামূলক পোস্ট করায় ভিয়েতনামের আদালত সাবেক এক আইনজীবীকে তিন বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে। রাজধানী হ্যানয় থেকে এএফপি জানায়, হ্যানয় বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক উপপ্রধান ৬৫ বছর বয়সী ট্রান দিন ত্রিয়েননেকে ‘গণতান্ত্রিক স্বাধীনতার অপব্যবহার করে রাষ্ট্রের স্বার্থ ক্ষুণ্ন করার’ অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।
আদালত জানায়, তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজে পোস্ট করা কিছু ‘অপ্রমাণিত বিষয়বস্তু’ আদালতের এবং সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির ব্যক্তিগত সুনাম ক্ষুণ্ন করেছে এবং আদালত এটিকে রাষ্ট্রের ক্ষতি হিসেবে বিবেচনা করেছে। হ্যানয়ের ভি দান ‘জনগণের জন্য’ নামে একটি আইনি প্রতিষ্ঠানের প্রধান ত্রিয়েন গত জুনে গ্রেফতার হন। গত সপ্তাহে তার আইন পেশার লাইসেন্স স্থগিত করা হয়।
২০১৩-২০১৮ সাল পর্যন্ত হ্যানয় বার অ্যাসোসিয়েশনের ডেপুটি চেয়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ত্রিয়েন অধিকারকর্মীদের পক্ষে এবং জমি দখলের মতো সংবেদনশীল বিষয়ে মক্কেলদের পক্ষে আইনি লড়াই করেছেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা তিনটি ফেসবুক পোস্ট গত বছর এপ্রিল ও মে মাসে করা হয়। পোস্টগুলোতে তিনি প্রধান বিচারপতিকে সমালোচনা করেন।
প্রধান বিচারপতি আসামিদের পরিবারের সদস্যদের বিচারে উপস্থিত হতে বাধা দেন এবং সাংবাদিক ও আইনজীবীদের প্রকাশ্য বিচারে ভিডিও ধারণ করতে বাধা দেন বলে অভিযোগ তোলা হয়। ভিয়েতনাম নিউজ এজেন্সি (ভিএনএ) জানিয়েছে, ত্রিয়েন ও তার আইনজীবীরা আদালতে যুক্তি দেন যে পোস্টগুলো ছিল তার বাকস্বাধীনতার অধিকার চর্চা এবং এটি আইনের লঙ্ঘন নয়।
তবে আদালত রায় দেয় যে, ভিয়েতনামের সংবিধানে বাকস্বাধীনতা স্বীকৃত হলেও তা রাষ্ট্রের স্বার্থ ক্ষুণ্ন করার জন্য ব্যবহার করা যাবে না। ভিএনএ জানায়, ‘বিচারিক প্যানেল রায়ে বলেছে, ট্রান দিন ত্রিয়েনের কাজ অত্যন্ত গুরুতর, যা নিরাপত্তা, শৃঙ্খলা ও সামাজিক নিরাপত্তার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।’
ভিয়েতনাম আনুষ্ঠানিকভাবে বাকস্বাধীনতা স্বীকার করলেও বাস্তবে এটি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত। রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স (আরএসএফ) ভিয়েতনামকে ১৮০টি দেশের মধ্যে ৭৪তম অবস্থানে রেখেছে এবং এটিকে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ কারাবন্দী সাংবাদিকের দেশ হিসেবে অভিহিত করেছে।
মানবাধিকার সংস্থা জানিয়েছে, ত্রিয়েনের বিরুদ্ধে যে ধারা ব্যবহার করা হয়েছে, পেনাল কোডের ধারা ৩৩১, তা ২০২৪ সালে অন্তত ২৪ জনকে দোষী সাব্যস্ত করতে ব্যবহৃত হয়েছে। গত মাসে ভিয়েতনামে নতুন নিয়ম কার্যকর হয়েছে, যেখানে ফেসবুক ও টিকটকের ব্যবহারকারীদের পরিচয় যাচাই এবং তথ্য কর্তৃপক্ষকে হস্তান্তরের প্রয়োজন হবে।
সূত্র: এএফপি
এসজেড