ঢাকা | বঙ্গাব্দ

অবশেষে গাজায় যুদ্ধবিরতি ঘোষিত

ট্রাম্প হোয়াইট হাউস কর্তৃক আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণার আগেই এই চুক্তিকে স্বাগত জানান।
  • অনলাইন ডেস্ক | ১৭ জানুয়ারি, ২০২৫
অবশেষে গাজায় যুদ্ধবিরতি ঘোষিত যুদ্ধবিরতি চুক্তি ঘোষিত হওয়ার পর গাজায় উল্লাস।

ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মি মুক্তি চুক্তি ঘোষণা করেছে কাতার ও যুক্তরাষ্ট্র। এই চুক্তি গাজা যুদ্ধের স্থায়ী অবসানের পথ প্রশস্ত করবে বলে তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেছে। কাতারের রাজধানী দোহা থেকে এএফপি এ খবর জানায়।


কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আব্দুল রহমান বিন জসিম আল-ছানি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, গাজা উপত্যকার যুদ্ধমান দুই গ্রুপ একটি যুদ্ধবিরতি  চুক্তিতে পৌঁছেছে এবং রোববার থেকে এটি কার্যকর হবে। ‘আমরা আশা করি এটি হবে যুদ্ধের শেষ অধ্যায় এবং আমরা আরও আশা করি যে, সব পক্ষ এই চুক্তির সমস্ত শর্ত বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হবে।’ 


এদিকে, বাইডেন এই আপস আলোচনাকে তার ক্যারিয়ারের কাজগুলোর মধ্যে ‘সবচেয়ে কঠিনতম’ অভিহিত করে বলেন, এই দিন এসেছে বলে তিনি অত্যন্ত সন্তুষ্ট।’ তিনি আরো বলেন, চুক্তির দ্বিতীয় ধাপ চূড়ান্ত হলেই ‘যুদ্ধের স্থায়ী অবসান’ ঘটবে। চুক্তিটি বহাল থাকবে বলে তিনি আস্থা প্রকাশ করেন। বাইডেন বলেছেন, এই চুক্তি ‘ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় মানবিক সহায়তা বৃদ্ধি করবে এবং জিম্মিদের পরিবারের সঙ্গে পুনর্মিলন ঘটাবে।’


মধ্যস্থতাকারীরা একটি চুক্তিতে পৌঁছেছে বলে জানানোর পর, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় জানায়, ‘চূড়ান্ত বিবরণ’ নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। নেতানিয়াহুর কার্যালয় জানায়, চুক্তিটি সুরক্ষিত করতে তাদের সহায়তার জন্য ধন্যবাদ জানাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে নেতানিয়াহু কথা বলেছেন।


এই চুক্তির ব্যাপারে মূলত আনুষ্ঠানিক ভূমিকা পালন করেন ইসরায়েলি প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হার্জোগ। তিনি বলেন, চুক্তিটি যুদ্ধের সূত্রপাত ঘটনো ৭ অক্টোবর, ২০২৩ সালে হামাসের হামলার সময় আটককৃত জিম্মিদের ফিরিয়ে আনার ‘সঠিক পদক্ষেপ’। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত ভাষণে হার্জোগ বলেন, আমাদের ছেলেমেয়েদের আমাদের কাছে ফিরিয়ে আনার চেয়ে বড় নৈতিক, মানবিক, ইহুদি বা ইসরায়েলি দায়িত্ব আর কিছু হতে পারে না। 


তেল আবিবে বিক্ষোভকারীরা চুক্তির খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে জিম্মি মুক্তির দাবি জানায়, অন্যদিকে গাজা জুড়ে হাজার হাজার মানুষ চুক্তিটি উদযাপন করছে। গাজা নগরীর বাস্তুচ্যুত ৪৫ বছর বয়সী রান্ডা সামেহ বলেন, ‘বিশ্বাস করতে পারছি না, এক বছরেরও বেশি চলা এই দুঃস্বপ্নের অবসান ঘটছে। আমরা অনেক মানুষকে হারিয়েছি, আমরা সবকিছু হারিয়েছি।’ হামাস বলেছে, যুদ্ধবিরতি ‘আমাদের মহান ফিলিস্তিনি জনগণের কিংবদন্তি তুল্য দৃঢ়তা এবং গাজা উপত্যকায় আমাদের সাহসী প্রতিরোধের ফলাফল।’


চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছেন ট্রাম্প


গাজার ইতিহাসের সবচেয়ে মারাত্মক যুদ্ধের অবসান ঘটাতে কয়েক মাস ধরে ব্যর্থ প্রচেষ্টার পর, বাইডেনের উত্তরসূরি ট্রাম্পের শপথ গ্রহণের মাত্র ক’দিন আগে এই চুক্তি করা হলো।  ট্রাম্প হোয়াইট হাউস কর্তৃক আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণার আগেই এই চুক্তিকে স্বাগত জানান। ট্রাম্পের আসন্ন প্রশাসন ও বাইডেনের বিদায়ী প্রশাসন উভয়ের দূতরা সর্বশেষ আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন। ট্রাম্প সোশ্যাল মিডিয়ায় বলেন, মার্কিন নির্বাচনে নভেম্বরে আমাদের ঐতিহাসিক বিজয়ের ফলেই এই মহাকাব্যিক যুদ্ধবিরতি চুক্তি সম্ভব হয়। গাজা যাতে আর কখনও সন্ত্রাসীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল না হয় তা নিশ্চিত করার জন্য তার হোয়াইট হাউস ইসরাইল ও তাদের মিত্রদের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ চালিয়ে যাবে।


সাহায্যের প্রয়োজন


মিশরের প্রেসিডেন্ট  আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি এই চুক্তির খবরকে স্বাগত জানিয়ে গাজায় ‘জরুরি মানবিক সাহায্যের প্রবেশ ত্বরান্বিত করার গুরুত্ব’ তুলে ধরেছেন। মিশরের রাষ্ট্র-সংশ্লিষ্ট আল-কাহেরা সংবাদমাধ্যম একটি নিরাপত্তা সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, সাহায্য প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার জন্য মিশরের সঙ্গে গাজার সীমান্তে রাফাহ ক্রসিং পুনরায় চালু করার জন্য সমন্বয়য় প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।


কার্যক্রমের ওপর ইসরায়েলি নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হতে যাওয়া জাতিসংঘ ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ) বলেছে, তারা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় সাহায্য প্রদান অব্যাহত রাখবে। ইউএনআরডব্লিউএ প্রধান ফিলিপ লাজ্জারিনি এক্স-এ একটি পোস্টে চুক্তির খবরকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘১৫ মাস অনেকেই মুহূর্তটির প্রত্যাশা করছেন, এই যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট ভয়াবহ দুর্ভোগের প্রতিক্রিয়ায়  দ্রুত, অবাধ ও নিরবচ্ছিন্ন মানবিক সহায়তা  প্রবেশ ও সরবরাহের প্রয়োজন।’


সূত্র: এএফপি


এসজেড