ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ঘনিষ্ঠজন ও প্রশংসাকারীদের মধ্যে ৮৩০টি প্লট বিতরণ করেছেন। এ তালিকায় আছেন সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, আমলা, সাংবাদিক, শিল্পী এবং আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরা। এমনকি মন্ত্রী ও সচিবদের সন্তানরাও এ তালিকায় রয়েছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের প্রায় দেড় দশকের শাসনামলে সরকারি চাকরি ও জনসেবায় ‘বিশেষ অবদান’ দেখিয়ে এসব প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
‘বিশেষ অবদানের’ আওতায় নির্বাচন কমিশনের সাবেক সচিব হেলালুদ্দীন আহমদও প্লট পেয়েছেন। ২০১৮ সালের বিতর্কিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় তিনি ছিলেন নির্বাচন কমিশনের সচিব। ওই নির্বাচনের ৫ মাস আগেই তিনি পূর্বাচলে রাজউকের সাড়ে ৭ কাঠার একটি প্লট পান। বর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন।
২০১৪ সালে নবম জাতীয় সংসদের একতরফা নির্বাচনে সংরক্ষিত নারী আসনে নির্বাচিত পিনু খানের ছেলে বখতিয়ার আলমও এ তালিকায় রয়েছেন। ২০১৩ সালে তাকে ‘জাতীয়ভাবে বিশেষ অবদানের’ কথা বলে পূর্বাচলে একটি প্লট দেওয়া হয়। পরে তিনি ২০১৫ সালে ঢাকায় এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে দুই রিকশাচালককে হত্যা করেন এবং যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পান।
রাজউকের পূর্বাচল, উত্তরা তৃতীয় প্রকল্প ও ঝিলমিল আবাসিক প্রকল্পের প্লটগুলো প্রভাবশালীদের মাত্র ২-৩ লাখ টাকায় বরাদ্দ দেওয়া হয়। বাজারমূল্য তখনও বহুগুণ বেশি ছিল, বর্তমানে এ প্লটগুলোর কাঠাপ্রতি মূল্য কোটি টাকার বেশি।
বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি প্লট বরাদ্দ পেয়েছেন নবম, দশম ও একাদশ সংসদের সাবেক সদস্যরা। এ সংখ্যা ২৫৬ জনেরও বেশি। এছাড়া ২২ জন সাবেক মন্ত্রী, ১২ জন প্রতিমন্ত্রী এবং ৩৯ জন সচিব ‘বিশেষ অবদানের’ নামে প্লট পেয়েছেন। এ তালিকায় রয়েছেন সাংবাদিক, শিল্পী, সংস্কৃতিকর্মী, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা, ব্যবসায়ী, ঠিকাদার, বিচারপতি, আইনজীবী এবং শিক্ষকরাও।
শেখ হাসিনার নিজের নাম, পরিবারের সদস্যদের নামেও প্লট বরাদ্দের তথ্য পাওয়া গেছে। পূর্বাচলে ১০ কাঠার একটি প্লট হাসিনার নিজের নামে বরাদ্দ হয়। তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ, ছোট বোন শেখ রেহানা এবং রেহানার দুই সন্তানের জন্যও ১০ কাঠার প্লট বরাদ্দ হয়েছে।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সম্প্রতি হাসিনা ও তার পরিবারের ছয়জনের বিরুদ্ধে তথ্য গোপন এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্লট নেওয়ার অভিযোগে মামলা করেছে।
রাজউকের প্লটের বরাদ্দ নিয়ে আরও বিস্তারিত তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, শীর্ষ রাজনীতিবিদ ও আমলারা ছাড়াও পুলিশ কর্মকর্তা, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মচারী এবং স্বজনপ্রীতিতে জড়িতদের প্লট দেওয়া হয়েছে।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বরাদ্দগুলো পক্ষপাতমূলক এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের উদাহরণ। এসব বরাদ্দের জন্য দায়ীদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।
thebgbd.com/NA