ইসলামে জমি-জমা সংক্রান্ত বিরোধের ক্ষেত্রে শান্তি, ন্যায়বিচার, এবং পারস্পরিক সমঝোতার উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। জমির মালিকানা, ব্যবহার এবং বিবাদ নিষ্পত্তির বিষয়ে ইসলামী শিক্ষায় সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা রয়েছে, যা ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করতে সহায়ক।
জমি-জমা সম্পর্কিত বিরোধের মূল কারণ হতে পারে মালিকানা, সীমানা নির্ধারণ বা সম্পত্তি ব্যবহারের অধিকার নিয়ে অস্পষ্টতা। ইসলাম নির্দেশ দেয় যে, কোনো সম্পত্তি বা জমি অন্যের অধিকার লঙ্ঘন করে দখল করা বা ব্যবহার করা হারাম। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা অন্যের সম্পত্তি অন্যায়ভাবে গ্রহণ করতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। কুরআনে বলা হয়েছে, "তোমরা একে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না।" (সূরা আল-বাকারাহ: ১৮৮)।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জমি সংক্রান্ত অধিকার ও বিরোধ নিয়ে বিশেষ সতর্কতার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, "যে ব্যক্তি অন্যের জমি অন্যায়ভাবে দখল করবে, কিয়ামতের দিন তাকে সেই জমি ঘাড়ে বহন করতে হবে, এবং সেই জমি সাত স্তর পর্যন্ত হবে।" (সহীহ বুখারি ও মুসলিম)। এই হাদিসে অন্যের সম্পত্তি নিয়ে অন্যায় আচরণ করার শাস্তির ভয়াবহতা স্পষ্ট করা হয়েছে।
জমি-জমা সংক্রান্ত সমস্যার সমাধানে ইসলাম সালিশ বা মধ্যস্থতার পদ্ধতি সুপারিশ করে। কোনো বিরোধ দেখা দিলে প্রথমেই সংশ্লিষ্ট পক্ষদের নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করতে বলা হয়েছে। যদি সমাধান সম্ভব না হয়, তবে নিরপেক্ষ ও অভিজ্ঞ সালিশের মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করতে হবে। রাসূল (সা.)-এর সময়ে এমন অনেক উদাহরণ পাওয়া যায়, যেখানে তিনি সালিশের মাধ্যমে জমি সংক্রান্ত বিরোধ মীমাংসা করেছেন।
ইসলাম সম্পত্তির সীমানা চিহ্নিত করার ওপরও গুরুত্ব দিয়েছে। হাদিসে বলা হয়েছে, "যে ব্যক্তি সীমানা চিহ্ন সরাবে (অন্যায়ভাবে জমি দখলের উদ্দেশ্যে), আল্লাহ কিয়ামতের দিন তাকে অভিশাপ দিবেন।" (সুনান আবু দাউদ)। সীমানা নির্ধারণ এবং তা যথাযথভাবে রক্ষা করা সম্পত্তির প্রতি সুবিচার নিশ্চিত করার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
জমি-জমা নিয়ে দ্বন্দ্ব নিরসনে ইসলামে ক্ষমা এবং ধৈর্যের গুরুত্বও উল্লেখযোগ্য। বিরোধে জড়িত পক্ষদের উচিত তিক্ততা পরিহার করা এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা। মীমাংসার সময় উভয় পক্ষের অধিকার এবং সম্মান রক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি।
সবশেষে, ইসলামের মূল শিক্ষা হল ন্যায়বিচার এবং শান্তি প্রতিষ্ঠা। জমি-জমা নিয়ে বিরোধ দেখা দিলে তা দ্রুত সমাধানের ব্যবস্থা করা উচিত, যাতে সমাজে বিশৃঙ্খলা বা শত্রুতার সৃষ্টি না হয়। আল্লাহর কাছে দোয়া করা এবং তাঁর বিধানের প্রতি দৃঢ় থাকা এসব বিরোধের স্থায়ী সমাধানে সহায়ক।
thebgbd.com/NIT