‘কানাডা ও মেক্সিকোর ওপর আরোপিত কঠোর শুল্ক নিয়ে আলোচনা করবেন’-মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এমন মন্তব্যের পরও বিশ্ব অর্থনীতির ওপর এ শুল্কের সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ বাড়ায় শেয়ারবাজারে ব্যাপক ধস নেমেছে। ওয়াশিংটন থেকে এএফপি জানায়, মেক্সিকো ও কানাডা থেকে আমদানিকৃত পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক বসানোর সিদ্ধান্তের ফলে ইউরোপ ও এশিয়ার শেয়ারবাজারে সোমবারের শুরুতেই দরপতন হয়।
মেক্সিকান পেসো ও কানাডিয়ান ডলারও মার্কিন ডলারের বিপরীতে দর হারিয়েছে, যদিও জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে। জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কানাডার জ্বালানি আমদানির ওপর শুল্ক ১০ শতাংশ নির্ধারণ করেছেন ট্রাম্প। শুধু প্রতিবেশী দেশগুলোই নয়, চীনকেও নতুন করে ১০ শতাংশ শুল্কের আওতায় এনেছেন ট্রাম্প, যা পূর্ববর্তী শুল্কের অতিরিক্ত।
রোববার ফ্লোরিডায় সপ্তাহান্তের সফর শেষে ওয়াশিংটনে ফিরে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, ‘সোমবার সকালে প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে কথা বলব এবং মেক্সিকোর সঙ্গেও আলোচনা করব।’ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ তিন বাণিজ্যিক অংশীদার- চীন, মেক্সিকো ও কানাডা- সবাই মঙ্গলবার শুল্ক কার্যকর হওয়ার পর পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
শুল্কের ব্যাপারে বরাবরই অনড় অবস্থানে থাকা ট্রাম্প দাবি করেছেন, এর ফলে মার্কিন ভোক্তাদের ওপর কোনও প্রভাব পড়বে না, যদিও অর্থনীতিবিদরা এই ধারণার বিরোধিতা করেছেন। তবে রোববার তিনি স্বীকার করেছেন, নাগরিকরা কিছুটা ‘অর্থনৈতিক কষ্ট’ অনুভব করতে পারেন। তিনি নিজের ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছেন, ‘কিন্তু আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে আবার মহান করব, এবং এই মূল্য দেওয়া সার্থক হবে।’
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই বাণিজ্যযুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের প্রবৃদ্ধি শ্লথ করতে পারে এবং স্বল্প মেয়াদে মূল্যস্ফীতি বাড়াতে পারে, যা ট্রাম্প এর আগে স্বীকার করতে চাননি। সুইসকোট ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক ইপেক ওজকার্ডেস্কায়া বলেন, ‘শুল্কের ফলে মার্কিন অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস তাৎক্ষণিকভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির পূর্ণ সুবিধা পেতে বাধা দেবে। বরং যুক্তরাষ্ট্র একাকী হয়ে পড়তে পারে।’
সুইস সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান মিরাবোডের বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞ জন প্লাসার্ড বলেন, ‘বিনিয়োগকারীরা শঙ্কিত, এই বাণিজ্যযুদ্ধ বৈশ্বিক অর্থনীতির মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে।’ ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসন এবং প্রাণঘাতী ওপিওইড ফেন্টানিল পাচার রোধের কারণ দেখিয়ে এসব পদক্ষেপকে ‘জরুরি ব্যবস্থা’ বলে বর্ণনা করেছেন।
এদিকে ট্রাম্পের মন্তব্যে কানাডায় তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, টরন্টো র্যাপ্টরস ও লস অ্যাঞ্জেলেস ক্লিপার্সের বাস্কেটবল ম্যাচ চলাকালে মার্কিন জাতীয় সংগীত পরিবেশনের সময় দর্শকরা দুয়োধ্বনি দিচ্ছে।
শনিবার কানাডার প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে ১৫৫ বিলিয়ন কানাডিয়ান ডলারের (১০৬.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) মার্কিন পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক বসানোর ঘোষণা দেন। প্রথম দফায় মঙ্গলবার থেকে এই শুল্ক কার্যকর হবে, এবং তিন সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয় দফা আরোপিত হবে। হোয়াইট হাউস এখন পর্যন্ত শুল্ক প্রত্যাহারের কোনো পরিকল্পনার ঘোষণা দেয়নি।
কানাডার মার্কিন রাষ্ট্রদূত কারস্টেন হিলম্যান এবিসি নিউজকে বলেছেন, ‘আমরা অবশ্যই যেকোনো বিকল্প প্রস্তাবের জন্য উন্মুক্ত।’ মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লাউডিয়া শেইনবাউমও ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়া দেখার অপেক্ষায় আছেন। তিনি জানিয়েছেন, তার অর্থমন্ত্রীকে ‘প্ল্যান বি’ বাস্তবায়নের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যেখানে নির্দিষ্ট কিছু শুল্ক ও অশুল্ক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
‘কেউ জিতবে না’
ট্রাম্প বলেছেন, তিনি ব্রিটেনের ওপর তৎক্ষণাৎ কোনো শুল্ক বসাচ্ছেন না, তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ক্ষেত্রে তা ‘অবশ্যই ঘটবে’। এর জবাবে ইইউ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, তারা শক্ত পদক্ষেপ নেবে। ব্রাসেলসে ইইউর প্রধান কূটনীতিক কায়া কাল্লাস সোমবার বলেন, ‘বাণিজ্যযুদ্ধে কেউ জেতে না। যুক্তরাষ্ট্রের আমাদের প্রয়োজন, আমাদেরও যুক্তরাষ্ট্রকে প্রয়োজন।’
ট্রাম্পের দ্বিতীয় দফা শাসনের দ্বিতীয় সপ্তাহের শেষে এই শুল্ক ঘোষণা এলো। এছাড়া, ট্রাম্প প্রশাসন সরকারের ব্যাপক সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। তিনি ধনকুবের ইলন মাস্ককে ‘ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সি’ চালানোর দায়িত্ব দিয়েছেন, যার লক্ষ্য হলো সরকারি ব্যয় কমানো।
সূত্র: এএফপি, স্কাই নিউজ
এসজেড