শিশুদের অভ্যর্থনা জানাতে স্টিলের দরজার কাছে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছেন দুইজন শিক্ষক। হাতে হাত রেখে কংক্রিটের সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে খুশিতে হাততালি দিয়ে ওঠেন মা-মেয়ে। আরেকটি ভারি দরজা পেরিয়ে বাঙ্কারে প্রবেশ করে উচ্ছ্বসিত শিশুরা। সোমবার (১৩ মে) প্রথম স্কুল খোলার দিন অনেক শিক্ষার্থী দেশটির ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে স্কুলে এসেছে। শিক্ষার্থীদের দুপুরের খাবারে ছিল বার্গার ও জুস।
এটি ইউক্রেনের প্রথম বাঙ্কার স্কুল, যেখানে এই সপ্তাহ থেকে শতাধিক শিশু পড়াশোনা করবে। স্কুলটি মাটি থেকে ছয় মিটার (২০ ফিট) গভীরে অবস্থিত। রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা থেকে শিশুদের রক্ষা করতেই ভূগর্ভস্থ এই স্কুলটি নির্মাণ করা হয়েছে।
ফুটপাতের উপর একটি ছোট্ট সাদা রঙের বাক্সের দরজা দিয়ে ১৫৫ জন শিক্ষার্থী খারকিভে এই প্রাথমিক স্কুলে পৌঁছায়। সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামার পরই করিডর ধরে শ্রেণীকক্ষের সারি। শ্রেণীকক্ষে কোনো জানালা নেই। তবে পুরো কক্ষজুড়ে উজ্জ্বল আলো এবং হলওয়েটি সাদা ও হলদে সবুজ রঙ করা।
ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভ দেশের উত্তর-পূর্বে রুশ সীমান্তের কাছে অবস্থিত। রাশিয়া সীমান্তের কাছে হওয়ায় যেখানে তিন বছরে পড়া ইউক্রেইন যুদ্ধের প্রায় পুরোটা সময় জুড়েই নানা ধাপে হামলা চালিয়েছে রুশ বাহিনী। গত কয়েক সপ্তাহে খারকিভে লড়াই আরও তীব্র হয়েছে। রাশিয়ার আকাশ হামলাও কয়েক গুণ বেড়ে গেছে।
যুদ্ধের এই সময়ে খারকিভের বেশিরভাগ শিশু বাড়িতে কম্পিউটারের মাধ্যমে পড়ালেখা করেছে। ৯ বছরের মাশা ও তার ৬ বছরের ভাই ওলেকসি একটি স্কুলে গিয়ে অন্যান্য শিশুদের সঙ্গে শ্রেণীকক্ষে বসে সরাসরি একজন শিক্ষকের কাছ থেকে শিখতে অনেক বেশি আগ্রহী হয়ে ওঠেছে।
তাদের মা মেরিনা প্রিখোদকো বলেন, ‘আমার মেয়ে তৃতীয় গ্রেডে। সে স্কুলে আসতে, অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে পোশাক পরতে এবং বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে আর অপেক্ষা করতে রাজি না। সে এগুলো কিছু খুব মিস করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার ছেলে প্রথম গ্রেডে। তার জন্য এটা যেন উৎসবের দিন। এবার অনলাইনে নয়, বরং সে সত্যি সত্যি তার সহপাঠীদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাবে।’
যুদ্ধের তীব্রতা বাড়া প্রসঙ্গে মেরিনা প্রিখোদকো বলেন, ‘হ্যাঁ, এটা খুবই ভয়ের। তবে যা কিছুই ঘটুক না কেন জীবন চলমান। তাই আমাদের এর মধ্যেই এই মূহুর্ত ও প্রতিদিন বেঁচে থাকার চেষ্টা করতে হবে।’
খারকিভের নতুন এই স্কুলটিতে বর্তমানে ৩০০ শিক্ষার্থী রয়েছে। নগরীর মেয়র ইহোর তেরেখভ বলেছেন, প্রতি শিফটে ৪৫০ শিক্ষার্থী নিয়ে দুই শিফট করা হবে।
খারকিভের মেয়র বলেন, ‘আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যে শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা উভয়েই স্কুলে অভ্যস্ত হয়ে উঠবে এবং আশা করছি ১ সেপ্টেম্বর থেকে এটি সম্পূর্ণভাবে শিক্ষার্থীদের উপযোগী হবে।’
স্কুলের প্রধান শিক্ষক আইহোর ভজনি বলেন, ‘আগের স্কুলে আর এই স্কুলের মধ্যে রাত-দিনের মত পার্থক্য। আমাদের স্কুলে বোম শেল্টার ছিল না। বেজমেন্ট ছিল, ভূগর্ভস্থ জায়গা ছিল। কিন্তু তা শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার জন্য উপযুক্ত ছিল না। এখানে মানসম্মতভাবে সব কিছু নকশা করা হয়েছে, সব কিছু আধুনিক।’
সূত্র: রয়টার্স