ঢাকা | বঙ্গাব্দ

কিয়ামতের দিনে আজাবের কারণ হবে যা

কিয়ামতের দিন মানুষের কাছে যে সমস্ত কাজ বা আচরণ আজাবের কারণ হবে, সেগুলি সম্পর্কে ইসলামিক শিক্ষা ও হাদীসে অনেক বিস্তারিত উল্লেখ রয়েছে।
  • নিজস্ব প্রতিবেদক | ১৫ এপ্রিল, ২০২৫
কিয়ামতের দিনে আজাবের কারণ হবে যা ছবি : সংগৃহীত।

কিয়ামতের দিন মানুষের কাছে যে সমস্ত কাজ বা আচরণ আজাবের কারণ হবে, সেগুলি সম্পর্কে ইসলামিক শিক্ষা ও হাদীসে অনেক বিস্তারিত উল্লেখ রয়েছে। মানুষের আমল, বিশ্বাস, আচরণ এবং তাদের জীবনযাপনের উপর নির্ভর করবে তাদের পরিণতি।


এখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় দেওয়া হলো, যেগুলি কিয়ামতের দিনে আজাবের কারণ হতে পারে:


১. শিরক (ইসলামের মৌলিক বিশ্বাসের বিরোধিতা): শিরক বা আল্লাহর সাথে অন্য কোন উপাস্যকে সমকক্ষ বা সমান ভাবা সবচেয়ে বড় পাপ। যারা শিরক করবে, তাদের জন্য আল্লাহ কিয়ামতের দিনে আজাব নির্ধারিত। আল্লাহ কুরআনে বলেন, "নিশ্চয় আল্লাহ শিরককে মাফ করেন না, তবে তার ছাড়া অন্য সব কিছু মাফ করতে পারেন।" (সুরা নিসা, আয়াত ৪৮)


২. কুফর (অবিশ্বাস): আল্লাহর প্রতি অস্বীকৃতি জানানো, নবী রাসূলদের প্রতি অবিশ্বাসী হওয়া, এবং ইসলাম ধর্মের প্রতি অবজ্ঞা বা নিন্দা করা কিয়ামতের দিনে আজাবের কারণ হবে। কুরআনে আল্লাহ বলেন, "যারা ঈমান আনে না এবং তাদের আমল শুদ্ধ নয়, তাদের জন্য রয়েছে অগ্নি, আর তা স্থায়ী হবে।" (সুরা বাকারাহ, আয়াত ৬)


৩. মিথ্যা বলা ও প্রতারণা করা: যারা মিথ্যা কথা বলে বা প্রতারণা করে, তাদের জন্য কিয়ামতের দিনে কঠিন শাস্তি অপেক্ষা করছে। নবী (সা.) বলেছেন, "মিথ্যা বলার কারণে এক ব্যক্তি যেহেতু আল্লাহর কাছে শাস্তি পাবে।" (সহীহ মুসলিম)


৪. ঋণ পরিশোধ না করা বা গরীবদের প্রতি অবিচার: যারা মানুষের অধিকার লঙ্ঘন করে, বিশেষ করে গরীব, অনাথ বা সুবিধাবঞ্চিতদের প্রতি অবিচার করে, তাদের জন্য কিয়ামতের দিনে কঠিন শাস্তি রয়েছে। নবী (সা.) বলেছেন, "যে ব্যক্তি মানুষের অধিকার হরণ করে, তার জন্য কিয়ামতের দিনে কঠিন আজাব রয়েছে।" (সহীহ বুখারি)


৫. আল্লাহর সীমা লঙ্ঘন করা (অনৈতিক কাজ করা): যারা আল্লাহর নিষিদ্ধ কাজ করে এবং তার সীমা অতিক্রম করে, তাদের জন্য কিয়ামতের দিনে আজাব রয়েছে। এই সব কাজের মধ্যে রয়েছে জিনাহ (ব্যভিচার), মদপান, মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া, চুরি করা ইত্যাদি। আল্লাহ কুরআনে বলেছেন, "যারা আল্লাহর সীমা অতিক্রম করে, তাদের জন্য রয়েছে কঠিন আজাব।" (সুরা বাকারাহ, আয়াত ২২৯)


৬. আত্মকেন্দ্রিত হওয়া (কৃপণতা ও অহংকার): যারা কৃপণ, অহংকারী বা নিজের অবস্থানকে বড় করে দেখে, তাদের জন্য আল্লাহ কিয়ামতের দিনে আজাব নির্ধারণ করেছেন। নবী (সা.) বলেছেন, "অহংকারের কারণে কোন ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না।" (সহীহ মুসলিম)


৭. সালাহ (নামাজ) ছেড়ে দেয়া: নামাজ ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ। যারা নিয়মিত নামাজ পড়েন না, তাদের জন্য কিয়ামতের দিনে শাস্তি অপেক্ষা করছে। নবী (সা.) বলেছেন, "যে ব্যক্তি নামাজ ছেড়ে দেয়, সে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক ভেঙে ফেলেছে এবং তার জন্য আজাব রয়েছে।" (সুনান আবু দাউদ)


৮. আল্লাহ ও রাসূলের আদেশ না মানা: যারা আল্লাহ এবং রাসূলের আদেশ-নিষেধ অনুসরণ না করে তাদের জন্য কিয়ামতের দিনে কঠিন শাস্তি থাকবে। আল্লাহ বলেন, "যারা আল্লাহ ও রাসূলকে অমান্য করে, তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নাম, সেখানে তারা চিরকাল থাকবে।" (সুরা আহযাব, আয়াত ৬)


৯. আত্মহত্যা করা: আত্মহত্যা করা ইসলামে নিষিদ্ধ। যারা আত্মহত্যা করবে, তাদের জন্য আল্লাহ কিয়ামতের দিনে আজাব নির্ধারণ করেছেন। নবী (সা.) বলেছেন, "যে ব্যক্তি আত্মহত্যা করেছে, সে তার জন্য নির্দিষ্ট শাস্তি ভোগ করবে।" (সহীহ বুখারি)


এই সব বিষয় ছাড়াও, ইমান, আমল এবং আল্লাহর সঠিক পথে চলা মানুষের জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কিয়ামতের দিনে প্রত্যেক ব্যক্তি তার আমলের ভিত্তিতে পুরস্কৃত বা শাস্তি পাবে।


thebgbd.com/NA