দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথ গ্রহণের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ১,৫০০ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করেছে মার্কিন প্রশাসন। এর মধ্যে অনেকেই গ্রেপ্তার হয়েছেন। মূলত ২০২৪ সালে গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শুরু হওয়া প্রো-প্যালেস্টাইন আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরাই এই পদক্ষেপের লক্ষ্য বলে মনে করা হচ্ছে।
বেশ কিছু শিক্ষার্থী বা সদ্য স্নাতকরা সামাজিক মাধ্যমে গাজা সংক্রান্ত পোস্ট বা আন্দোলনে সরাসরি জড়িত থাকার কারণে ভিসা হারিয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি—এই শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ‘ইহুদিবিদ্বেষ এবং হামাসপন্থী মনোভাব’ ছড়াচ্ছেন। যদিও আইনজীবী, মানবাধিকারকর্মী ও শিক্ষার্থীরা এই অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করেছেন। উল্লেখযোগ্যভাবে, বহু ইহুদি ছাত্র ও সংগঠন এই প্রো-প্যালেস্টাইন আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে আসছে।
কতজন শিক্ষার্থী ভিসা হারিয়েছেন?
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও মার্চের শেষ দিকে জানান, আনুমানিক ৩০০ শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করা হয়েছে। তবে আসল সংখ্যা এর অনেক বেশি। আমেরিকান ইমিগ্রেশন লইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের মতে, প্রায় ৪,৭০০ শিক্ষার্থীকে SEVIS (Student and Exchange Visitor Information System) ডেটাবেস থেকে মুছে ফেলা হয়েছে। NAFSA (ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব ফরেন স্টুডেন্ট অ্যাডভাইজারস) বলছে, ১,৪০০ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ভিসা বাতিলের রিপোর্ট আছে।
কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয় প্রভাবিত?
ভিসা বাতিলের ঘটনা ঘটেছে সারা যুক্তরাষ্ট্রের ২৪০টিরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে। এর মধ্যে রয়েছে: হার্ভার্ড, স্ট্যানফোর্ড-এর মতো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ডসহ বড় বড় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। এছাড়া ছোট কিছু লিবারেল আর্টস কলেজও রয়েছে তালিকায়
কেন এই ভিসা বাতিল?
প্রশাসনের ব্যাখ্যা—শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন, ‘ক্যাম্পাসে বিশৃঙ্খল কর্মসূচি চালাতে নয়।” ২৮ মার্চ মার্কো রুবিও বলেন, “আমরা কর্মী আমদানি করতে চাই না। তারা এখানে পড়তে এসেছে, নেতৃত্ব দিতে নয়।’
তবে বহু শিক্ষার্থী জানান, কোনো রকম পূর্ব নোটিশ ছাড়াই তাদের স্ট্যাটাস বাতিল করা হয়েছে। কেউ কেউ শুধুই ট্রাফিক টিকিটের মতো ছোটখাটো কারণে ভিসা হারিয়েছেন।
ওয়াশিংটন ডিসির অভিবাসন আইনজীবী মোহাম্মদ আলী সৈয়দ জানান, ‘এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ফেডারেল কোর্টে মামলা, স্টে অর্ডার এবং ট্রান্সফার অর্ডার (TRO) চাওয়া হচ্ছে।’
ক্যাম্পাসে এর প্রভাব কী?
পেনসিলভানিয়ার লাফায়েত কলেজের অধ্যাপক হাফসা কঞ্জওয়াল বলেন, ‘বিদেশি শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মধ্যে চরম ভীতি ও অনিশ্চয়তা কাজ করছে। অনেকে দেশে ফিরতে ভয় পাচ্ছেন, কারণ ফিরে আসতে পারবেন কি না—সেই নিশ্চয়তা নেই।’
একজন অধ্যাপক বলেন, ‘অনেক আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী নিজেদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অ্যাকাউন্ট মুছে ফেলছেন, কেউ কেউ প্রকাশ্যে কোনো মতামত দিতে সাহস করছেন না।’
তিনি আরও বলেন, ‘ট্রাম্প প্রশাসন মূলত বিদেশিদের জানাতে চায়, এখানে তাদের অধিকার নয়, শুধু শর্তসাপেক্ষ সুবিধা রয়েছে। ক্যাম্পাসগুলোকে ‘বামপন্থী’ মনে করে, আর ফিলিস্তিন ইস্যুকে সামনে এনে প্রশাসন এই প্রগতিশীল কেন্দ্রগুলোকে চাপে ফেলতে চাইছে।’
thebgbd.com/NA