ঢাকা | বঙ্গাব্দ

সৌদির ‘গোলাপনগরী' তায়েফ

তায়েফের পাহাড়ি এলাকায় প্রায় ৮০০ ফুলের খামারে বছরে প্রায় ৩০ কোটির মতো গোলাপ উৎপন্ন হয়।
  • অনলাইন ডেস্ক | ২৪ এপ্রিল, ২০২৫
সৌদির ‘গোলাপনগরী' তায়েফ গোলাপ ফুটে আছে।

কণ্টকাকীর্ণ ঝোপ ছাঁটাই ও কষ্টকর ফসল তোলার কাজের দশকের পর দশক পেরিয়ে খালাফুল্লাহ আল-তালহি মরু-গোলাপের সুবাস বোতলবন্দি করার শিল্পে নিপুণতা অর্জন করেছেন। ‘গোলাপ এতটাই ভালোবাসি, সন্তানের চেয়ে বেশি যত্ন নিই,’ পশ্চিম সৌদি আরবের তায়েফে নিজের ফুলের খামার থেকে এএফপিকে বলেন ৮০ বছর বয়সী এই চাষি।


গোলাপনগরী নামে পরিচিত তায়েফের পাহাড়ি এলাকায় প্রায় ৮০০ ফুলের খামারে বছরে প্রায় ৩০ কোটির মতো গোলাপ উৎপন্ন হয়। নিজস্ব হিসেব অনুযায়ী, তালহি একাই প্রতি বছর ৫০ থেকে ৬০ লাখ গোলাপ চাষ করেন। বসন্তকালে আবহাওয়া কিছুটা নরম হলে মরুপ্রান্তরে ছড়িয়ে পড়ে গোলাপের নানারঙা বাহারী শোভা। সূর্য ওঠার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বহু শ্রমিক হাতে হাতে ফুল তোলে।


পাপড়িগুলো ভিজিয়ে রেখে ঘণ্টার পর ঘণ্টা জ্বাল দিয়ে বিশেষ কায়দায় সেই ফুলের গন্ধ সংরক্ষণ করা হয়, যা পরে পাতন প্রক্রিয়ায় পরিণত হয় সুগন্ধি তেলে। তায়েফের গোলাপ দীর্ঘদিন ধরে মক্কার কাবা শরিফ ধোয়ার গোলাপজল তৈরিতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এছাড়া এসব ফুল থেকে তৈরি আতর হজ ও ওমরাহ পালন করতে আসা মুসল্লিদের কাছে বেশ জনপ্রিয়।


‘অনেক গোলাপপ্রেমী রয়েছে’


‘তায়েফের গোলাপের উৎপাদন সীমিত, তাই রপ্তানি খুব কম হয়। কারণ স্থানীয় চাহিদাই পূরণ হয় না। আমাদের দেশে অনেকেই শুধু গোলাপ আতরই ব্যবহার করেন,’ বলেন তালহি। স্বল্প পরিমাণ গোলাপতেল বিদেশে রপ্তানি করা হয় সুগন্ধি, ময়েশ্চারাইজার বা সাবানের মতো প্রসাধনী তৈরিতে ব্যবহারের জন্য। অর্থনৈতিক ডেটাবেইস ট্রেন্ডইকোনমির তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে সৌদি আরব মাত্র ১৪১ মিলিয়ন ডলারের সুগন্ধি পণ্য রপ্তানি করেছে, যার মধ্যে গোলাপজলও রয়েছে।


ফসল তোলার মৌসুমে তালহির খামারে প্রতিদিন হাজারে হাজারে ফুল তোলা হয়। ‘আমরা খামারে জন্মেছি, কৃষিকাজ আমাদের রক্তে মিশে আছে,’ বলেন তিনি, সাদা পোশাক ও লাল-সাদা চেকের মস্তকাবরণ পরে। কিন্তু এখন অনিয়মিত আবহাওয়া—যেমন প্রচণ্ড গরম, তীব্র শীত ও অপ্রত্যাশিত বন্যা—তাইফের বিখ্যাত গোলাপের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।


‘আমার প্রাণ’


জলবায়ু বিজ্ঞানীরা বারবার সতর্ক করেছেন যে, বিশ্ব তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়বে চরম আবহাওয়ার ঘটনা—তাপপ্রবাহ, ভারী বৃষ্টিপাত ও খরার মতো দুর্যোগ। বিস্তৃত মরুভূমি ও শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে সৌদি আরব বিশেষভাবে ঝুঁকিতে রয়েছে।


অ্যাটলান্টিক কাউন্সিলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে লবণাক্ততা, ক্ষয় ও মরুকরণ ত্বরান্বিত হচ্ছে, যা সৌদি আরবে কৃষিজমির মান ও উৎপাদনশীলতা কমিয়ে দিচ্ছে।’ প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ২০৫০ সালের মধ্যে গমের উৎপাদন ২০ থেকে ৩০ শতাংশ কমে আসতে পারে। একইসঙ্গে খেজুরগাছসহ অন্যান্য প্রধান ফসলেও ফলন হ্রাসের আশঙ্কা রয়েছে।


তালহির ভাষায়, ‘তায়েফের মরুভূমিতেও এর প্রভাব স্পষ্ট। গত বছর আর তার আগের বছর খুব ঠাণ্ডা পড়ে। অনেক চাষিই একটি গোলাপও তুলতে পারেননি।’ তবে এবার পরিস্থিতি কিছুটা সহনীয়। ‘আবহাওয়া বদলাচ্ছে ঠিকই, কিন্তু এবারের মৌসুম অনেক হালকা,’ বলেন তিনি।


আবহাওয়া হয়তো আগের মতো নির্ভরযোগ্য নয়, কিন্তু তালহি নিজেই হয়ে উঠেছেন এক অবিচল আশ্রয়। ৮০ বছর বয়স হলেও তিনি এখনো প্রতিদিন সূর্য ওঠার আগে ঘুম থেকে উঠে খামারে যান, এবং বেশ রাত পর্যন্ত সেখানে কাজ করে যান। ‘এই খামারই আমার প্রাণ, আমার হৃৎস্পন্দন,’ বলেন তালহি। ‘আল্লাহ চাইলে, মৃত্যুই একমাত্র আমাকে এর থেকে আলাদা করতে পারবে।’


সূত্র: এএফপি


এসজেড