পূর্ব আজারবাইজানে সফর করার সময় ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিসহ দেশটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বহনকারী একটি হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে। এতে হতাহত বা ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে জানান যায়নি।
দেশটির রাষ্ট্রয়াত্ত টিভিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে। ঘটনাস্থলে এখন অভিযান চালানোর প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। পরবর্তীতে এ ব্যাপারে আরও বিস্তারিত জানানো হবে বলে জানিয়েছে সরকারি টিভি চ্যানেলটি।
রোববার (১৯ মে) এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে জানিয়েছে ইরানের বার্তাসংস্থা তাসনিম।
রোববার (১৯ মে) দেশটির পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের জোলফার কাছে এ ঘটনা ঘটে। প্রেসিডেন্ট রাইসি শনিবার আজারবাইজানে যান। সেখানে আজারি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আজারবাইজানের সীমান্তবর্তী এলাকায় একটি বাঁধ উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যান প্রেসিডেন্ট রাইসি। সেখান থেকে ফেরার সময় ভারজাকান এলাকায় হেলিকপ্টারটি অবতরণের সময় বিধ্বস্ত হয়েছে।
দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম আরও জানিয়েছে, এই বহরে তিনটি হেলিকপ্টার ছিল। যার মধ্যে দুটি নিরাপদে ফিরে এসেছে।
যে হেলিকপ্টারটি আছড়ে পড়েছে সেটিতে প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি ছাড়াও ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেন আমিরাব্দুল্লাহিয়ান, তাবরিজের জুমার নামাজের ইমাম এবং আয়াতুল্লাহ মোহাম্মদ আলী আলি-হাসেম। তিনি ওই অঞ্চলে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতার প্রতিনিধি ছিলেন।
জ্বালানিমন্ত্রী আলী আকবর মেহরাবিয়ান এবং আবাসন ও পরিবহণমন্ত্রী মেহেরদাদ বাজারপাস অন্য দুটি হেলিকপ্টারে ছিলেন। যেগুলো নিরাপদে ফিরে এসেছে।
দেশটির আধাসরকারি বার্তাসংস্থা তাসনিম নিউজ জানিয়েছে, প্রেসিডেন্টের হেলিকপ্টারে যারা ছিলেন তারা জরুরি বার্তা পাঠাতে সমর্থ হয়েছিলেন।
ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিকে বহনকারী একটি হেলিকপ্টার আজারবাইজান প্রদেশে দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয়েছে। তবে হেলিকপ্টারে থাকা রাইসির কয়েকজন সঙ্গী ‘নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ করতে সক্ষম হয়েছেন।’
আরও বলা হয়েছে, হেলিকপ্টারের অনুসন্ধানে এরই মধ্যে অভিযান শুরু হয়েছে। কয়েকটি উদ্ধারকারী দল দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন।
পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের ডেপুটি গভর্নর ফর ডেভেলপমেন্ট আলি জাকারি স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে বলেন, এখনও দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছাইনি এবং ঘটনার বিস্তারিত জানা নেই।
জাকারি জানান, দুর্ঘটনাটি ভারজাকানের কাছে ঘটেছে। তিনটি হেলিকপ্টার ছিল, যার মধ্যে দুটি নিরাপদে অবতরণ করেছে এবং একটি বিধ্বস্ত হয়েছে।
প্রাদেশিক এই কর্মকর্তা বলেন, সম্ভাব্য হতাহতের সংখ্যা, তাদের পরিচয়, সেইসঙ্গে ঘটনার সঠিক কারণ এখনও জানা যায়নি।
ইরানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আমির ভাহিদি জানিয়েছেন, একাধিক উদ্ধারকারী দল ঘটনাস্থলে যাচ্ছে। তবে তাদের সেখানে পৌঁছাতে সময় লাগবে। কারণ বর্তমানে সেখানে প্রতিকূল আবহাওয়া বিরাজ করছে।
সরকারি সংবাদমাধ্যম ইরনা নিউজ জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি দিজমার নামের একটি বন ও পাহাড়ি অঞ্চলে বিধ্বস্ত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তবে প্রেসিডেন্ট রাইসি কী ধরনের হেলিকপ্টারে ভ্রমণ করছিলেন সেটি এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
ইরান বিভিন্ন ধরনের হেলিকপ্টার ব্যবহার করে। তবে কয়েক দশক ধরে পশ্চিমা দেশগুলো নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রাখায় নতুন হেলিকপ্টার অথবা যন্ত্রাংশ ক্রয় করতে পারে না দেশটি।
বর্তমানে ইরানের কাছে যেসব হেলিকপ্টার রয়েছে সেগুলোর বেশিরভাগই ১৯৭৯ সালের ইসলামিক বিপ্লবের আগের।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা সাংবাদিক রেসুল সর্দার তেহরান থেকে বলেছেন, “হেলিকপ্টার, বিমান, ইরানে যেগুলো ব্যবহার করা হয় সেগুলো বেশ পুরোনো। এ কারণে ইরানে প্রায়ই এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে থাকে।”
ইরানের রেড ক্রিসেন্ট জানিয়েছে, দুর্ঘটনাস্থলে উদ্ধারকারী দল পাঠানো হয়েছে।
সূত্র: আলজাজিরা