ঢাকা | বঙ্গাব্দ

পোল্যান্ডের অর্থনীতিতে ইউক্রেন

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর ইউক্রেনীয় শরণার্থীরা পোল্যান্ডের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ২.৭ শতাংশ সৃষ্টি করেছে।
  • অনলাইন ডেস্ক | ০৩ জুলাই, ২০২৫
পোল্যান্ডের অর্থনীতিতে ইউক্রেন ইউক্রেনীয় শরণার্থীরা।

পোল্যান্ডের রাজধানীর এক গ্যারেজে হাতুড়ি হাতে ব্যস্ত ইউক্রেনীয় শরণার্থী ওলেক্সান্দর বেলাইবা একটি ভ্যান মেরামত করছেন। ৩৩ বছর বয়সী এই যুবক তার কাজের প্রতি নিবেদিত এবং পোল্যান্ডে থাকতে চান। যদিও সেখানে অভিবাসনবিরোধী মনোভাবও বাড়ছে তবে দেশটি অর্থনৈতিকভাবে শরণার্থীদের কাছ থেকে উপকৃতই হচ্ছে। 


ওয়ারশ থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, ইউক্রেনীয় শরণার্থী ওলেক্সান্দর বেলাইবা বলেন, পোল্যান্ডে কাজ না করে থাকা অসম্ভব। আর ইউক্রেনীয়রা এমন মানুষ নয়, যারা বেকার বসে থাকে। তিনি রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ফ্রন্টলাইনে ১৩ মাস যুদ্ধ করেছেন এবং ছয় মাস আগে পোল্যান্ডে এসে তার এক বাল্যবন্ধুর গ্যারেজে কাজ শুরু করেন।


২০২২ সালে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর পোল্যান্ড লক্ষ লক্ষ ইউক্রেনীয় শরণার্থীর জন্য সীমান্ত খুলে দেয় এবং নানা সুবিধা প্রদান করে। বর্তমানে এসব বিশেষ সুবিধার অধিকাংশই বাতিল হয়েছে। ইউক্রেনীয়রা এখন পোল্যান্ডের নাগরিকদের মতো একই অধিকার ও দায়িত্ব বহন করছেন। তাদের জন্য স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষাপ্রাপ্তি বিনামূল্যে নিশ্চিত করা হয়েছে।


পোল্যান্ডে বর্তমানে আনুমানিক ১৫ লাখ ইউক্রেনীয় বসবাস করছেন, যাদের মধ্যে ১০ লাখ শরণার্থী হিসেবে বিবেচিত, এবং বেশিরভাগই নারী ও শিশু। সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদন অনুসারে, তাদের উপস্থিতি পোল্যান্ডের ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত লাভজনক। ডেলয়েট ও জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইচআর) এক যৌথ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর ইউক্রেনীয় শরণার্থীরা পোল্যান্ডের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ২.৭ শতাংশ সৃষ্টি করেছে। 


প্রতিবেদনে সতর্ক করে বলা হয়েছে, যদি শরণার্থীরা চলে যায়, তবে এই লাভ হারিয়ে যাবে। ডেলয়েট আরও বলেছে, শরণার্থীরা শ্রমবাজারে কর্মী ও উদ্যোক্তা হিসেবে অবদান রাখে এবং ভোক্তা হিসেবে চাহিদা বাড়ায়। তাদের তথ্যমতে পোল্যান্ডে ৬৯ শতাংশ ইউক্রেনীয় শরণার্থী কাজ করছেন।


প্রতিবেদনটি পোলিশ জাতীয়তাবাদী এবং অতি-ডানপন্থী রাজনীতিবিদদের দ্বারা প্রদত্ত অসংখ্য বক্তব্যের বিরুদ্ধে যায়, যারা ইউক্রেনীয়দের ‘পোল্যান্ডের সুবিধা নেওয়ার’ অভিযোগ করেন। সাম্প্রতিক নির্বাচনী প্রচারণার সময় জাতীয়তাবাদী প্রেসিডেন্ট কারোল নাভরোস্কি একটি স্লোগান দিয়েছিলেন, পোল্যান্ড আগে, পোলিশরা আগে’। তিনি বলেন, সামাজিক সুবিধা মূলত পোলিশদের পাওয়া উচিত। এমনকি হাসপাতালের লাইনে পোলিশদের অগ্রাধিকার থাকা উচিত ।


ফার-রাইট নেতা স্লাওমির মেনচেন অভিযোগ করেন, ইউক্রেনীয়রা যেন পোলিশদের ‘মূর্খ’ ভাবছে। যারা তাদের উপস্থিতির খরচ বয়ে নিয়ে যাচ্ছে। তবে বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা। ওয়ারশ-ভিত্তিক ‘ডব্রো ডব্রো’ ক্যাফে চেইনের মালিক ওলেহ ইয়ারোভিই বলেন, এখানে ৯৫ শতাংশ কর্মীই ইউক্রেনীয়। ‘পোল্যান্ডে সামাজিক ভাতা দিয়ে ভালোভাবে চলা সম্ভব নয়।  পোল্যান্ডে জীবন খুব সস্তা নয়, আর স্বাভাবিকভাবে বাঁচতে হলে অনেক শরণার্থীকে অতিরিক্ত কাজ করতে হয়।


একটি শপিং মলে ড্রাই-ক্লিনিং কর্মী ২৫ বছর বয়সী ওলেসিয়া গ্রিগোরাশ (যিনি যুদ্ধের ঠিক আগে পোল্যান্ডে ঘুরতে আসেন) ওলেহ ইয়ারোভিইর বক্তব্যে একমত পোষণ করে বলেন, আমার সব বন্ধুই কাজ করছে, অনেকে তো একসঙ্গে দুটি চাকরি করছে।  


ইউএনএইচআর-এর মতে, ইউক্রেনীয়রা মূলত নিম্ন আয়ের চাকরিতে যুক্ত। পোল্যান্ডে তাদের আগমনে সেখানকার বেকারত্বের হার বৃদ্ধি পায়নি। যা এখনও প্রায় ৫ শতাংশে স্থির রয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পোল্যান্ডের অর্থনীতি একটি বৃহত্তর কর্মীবাজার থেকে উপকৃত হয়েছে। যার ফলে দক্ষতায় বিশেষায়ন ও উৎপাদনশীলতার বৃদ্ধি ঘটেছে।


৪৭ বছর বয়সী ইউক্রেনীয় নির্মাণ ব্যবসায়ী ভিটালি ভিজিনস্কি বলেন, পোল্যান্ড থেকে কোনও টাকা নিইনি। যা কিছু অর্জন করেছি, নিজের হাতে করেছি এবং এখানে কর দেই। তার পেছনেই ইউক্রেনীয়, বেলারুশীয় এবং পোলিশ শ্রমিকরা ওয়ারশর এক দূতাবাসের বাগানে পাথর বসাচ্ছেন। 


ইউক্রেনীয় উদ্যোক্তা সংস্থার নির্বাহী পরিচালক কাতেরিনা গ্লাজকোভা (যিনি কিয়েভ ও ওয়ারশে বসবাস করেন) বলেন, পোল্যান্ড ‘ইউক্রেনীয় ব্যবসা নিবন্ধন, শিক্ষা ও কর্মসংস্থান প্রক্রিয়া সহজ করেছে। পোলিশ অর্থনৈতিক ইনস্টিটিউটের তথ্য মতে, ইউক্রেনীয়রা পোল্যান্ডে গঠিত মূলত নির্মাণ ও সেবা খাতের প্রতি ১০টি ক্ষুদ্র ব্যবসার মধ্যে একটির প্রতিষ্ঠাতা।


পোল্যান্ডের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক বিজিকে-র একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনীয় অভিবাসীদের থেকে কর ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে রাজস্ব এসেছে প্রায় ১৫.১ বিলিয়ন জ্লোটি (৩.৫ বিলিয়ন ইউরো)। যেখানে শিশু ভাতার পরিমাণ ছিল মাত্র ২.৮ বিলিয়ন জ্লোটি। ইউক্রেনীয় উদ্যোক্তা সংস্থার নির্বাহী পরিচালক কাতেরিনা গ্লাজকোভা বলেন, কর ও বাজেটে অবদান রাখার মাধ্যমে ইউক্রেনীয়রা যত সহায়তা পেয়েছে, তার চেয়ে অনেক বেশি ফিরিয়ে দিয়েছে।


সূত্র: এএফপি 


এসজেড