ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারকে হত্যার ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতে ভারতে গ্রেপ্তার জিহাদ হাওলাদারের বাড়ি খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার বারাকপুর গ্রামে। সংসদ সদস্যের মাংস কেটে জিহাদ কিমা তৈরি করে বলে গণমাধ্যমে জানিয়েছে ভারতের আইন শৃঙ্খলা বাহিনী।
টেলিভিশনসহ গণমাধ্যমে জিহাদের ছবি ও এমন নৃশংসতার খবর দেখে বিস্মিত তার পরিবার এবং এলাকাবাসী। গত দেড় বছর ধরে জিহাদ কোথায় আছে তা জানতো না তার স্ত্রী, বাবাসহ পরিবারের সদস্যরা।
দিঘলিয়া উপজেলার বারাকপুর বাজারের পাশে টিনশেডের বাড়িতে থাকতেন জিহাদ হাওলাদার। জিহাদ ও তার বাবা জয়নাল হাওলাদার দুজনই পেশায় রং মিস্ত্রির কাজ করতেন। শুক্রবার দুপুরে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, আশপাশের লোকজন সেখানে ভিড় করেছেন। তারা জিহাদের স্ত্রী ও বাবার সঙ্গে কথা বলছেন।
জিহাদের স্ত্রী মুন্নি বেগম বলেন, প্রায় দেড় বছর আগে ঢাকা ও যশোরের দুটি মামলায় জড়িয়ে পড়ায় তিনি গা ঢাকা দেন। তখন যশোর থেকে একবার ডিবি পুলিশ বাড়িতে এসেছিল। বাড়ি ছাড়ার পর থেকে কোথায় আছেন তা আমরা জানি না।
সর্বশেষ ৯ মাস আগে ফোন করে এক-দেড় মিনিট কথা বলে আড়াই বছরের ছেলে ও বাবা-মার খবর নিয়েছিল। কিন্তু তখন কোথায় আছে তা বলেনি। সংসদ সদস্যকে হত্যা মিশনে নেতৃত্ব দেয়া শীর্ষ চরমপন্থি নেতা শিমুল ভূঁইয়ার সাথে তার কোনো সম্পর্ক ছিল কিনা অথবা এই ধরণের কোনো অপকর্মের সাথে জড়িত ছিল কিনা তাও আমার জানা নেই।
ওই গ্রামের বাসিন্দা নজরুল আকন্দ ও মো. সোহেল বলেন, জিহাদ কিছুটা উচ্ছৃঙ্খল ছিল। কিন্তু এমন নৃশংস কাজ করবে তা কোনোদিন ধারণা ছিল না। টিভিতে তার ছবি ও খবর দেখে গ্রামের সবাই কিছুটা হতবাক হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, ছোটবেলা থেকেই জিহাদ উচ্ছৃঙ্খল ছিল। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পর আর লেখাপড়া করেনি। মাঝেমাঝে এলাকায় মারামারি হলে জিহাদ তাতে সম্পৃক্ত হতো। ২ দফায় প্রায় ৮ মাস জেলও খেটেছে। কিন্তু এতো দুর্ধর্ষ তো সে ছিল না। ঘটনার সাথে জড়িত থাকলে শাস্তির দাবি জানান এলাকাবাসী।
জিহাদের বাবা জয়নাল হাওলাদার বলেন, এলাকায় মারামারি ঘটনা থেকে তার ছেলে সন্ত্রাসের সাথে জড়িয়ে পড়ে। তবে এমন ঘটনা ঘটাবে তা কোনোদিন ভাবেননি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, তারা ধারণা করছেন জিহাদ দেশে থাকাকালে তার সঙ্গে চরমপন্থি নেতা শিমুলের পরিচয় হয় অথবা সে পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেয়। হয়তো শিমুল তাকে এই হত্যা মিশনে সম্পৃক্ত করেছে। তবে বিষয়টি তারা নিশ্চিত নন, তারা খোঁজখবর নিয়ে দেখছেন।
দিঘলিয়া থানার ওসি বাবুল আক্তার জানান, জিহাদ হাওলাদারের বিরুদ্ধে দিঘলিয়া থানায় ২০২৩ সালের ৮ জুন অস্ত্র আইনে, ২০২০ সালের ২৯ মে মারামারি ও ২০২০ সালের ২২ এপ্রিল মারামারির মামলা রয়েছে। তবে অনেক দিন ধরে সে আত্মগোপনে রয়েছে।
ভারতের আইন শৃঙ্খলা বাহিনী গণমাধ্যমে জানিয়েছে, পাসপোর্ট ছাড়াই ভারতে গিয়েছিল জিহাদ। তিনি মুম্বাইতে কসাইয়ের কাজ করতেন। পরিকল্পিত এই হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত মার্কিন নাগরিক আখতারুজ্জামান শাহীন কলকাতায় যাওয়ার ২ মাস আগেই জিহাদকে কলকাতায় ডেকে আনা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে জিহাদ স্বীকার করেছে, আখতারুজ্জামানের নির্দেশে তিনিসহ ৪ জন এমপি আনারকে ফ্ল্যাটে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। হত্যার পর তার শরীর থেকে মাংস এবং হাড় আলাদা করে ফেলে। মূলত পরিচয় নষ্ট করার জন্য এমপির মাংস কিমা করে তা প্লাস্টিকের ব্যাগে রাখা হয়।
আর হাড়গুলোকে ছোট ছোট টুকরো করে নেয়া হয়। পরে ওই ব্যাগগুলো ফ্ল্যাট থেকে বের করে নানা ধরনের যানবাহন ব্যবহার করে কলকাতার বিভিন্ন এলাকায় ফেলে দেয়া হয়।