ঢাকা | বঙ্গাব্দ

এবারের ঈদে হাট কাঁপাতে আসছে ‘সুলতান’ ও ‘পুষ্পা’

কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে নানা উপমা আর বাহারি নামে গরু মোটাতাজা করছেন মৌলভীবাজারের খামারিরা।
  • | ২৯ মে, ২০২৪
এবারের ঈদে হাট কাঁপাতে আসছে ‘সুলতান’ ও ‘পুষ্পা’ সংগৃহীত

কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে নানা উপমা আর বাহারি নামে গরু মোটাতাজা করছেন মৌলভীবাজারের খামারিরা। এরইমধ্যে অনেক খামারে আগাম বেচাবিক্রি শুরু হয়ে গেছে। খামারিরা জানিয়েছেন, এ বছর অন্য বছরের তুলনায় কিছুটা ভালো দামে গরু বিক্রির আশা করছেন তারা।


মৌলভীবাজার সদর উপজেলার কামালপুর বাজার এলাকার পিকে অ্যাগ্রো ফার্মে গিয়ে দেখা যায়, সবুজ ঘাস আর পানি খাইয়ে একদম প্রাকৃতিক পরিবেশে পরম আদরযত্নে লালনপালন করা হচ্ছে ‘বিগ বস’, ‘সুলতান’ ও ’পুষ্পা’ নামের বিশাল আকৃতির একেকটি গরুকে। খামারের পরিচালক ফরিদ আহমদ এবং খামার দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা মো. নয়নের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের।


তারা বলেন, মূলত কোরবানির বাজার ধরতেই অনেক আগে থেকেই খামারে গরু মোটাতাজা করছেন তারা। তাদের এ খামারে যাতে কোনো রকমের কোনো সমস্যার সম্মুখীন হতে না হয়, সেজন্য প্রাণিসম্পদ বিভাগ সব সময় তাদের খোঁজখবর নিয়ে থাকে। এবছরও প্রাণিসম্পদ বিভাগের সহায়তায় তাদের এ খামার পরিচালিত হচ্ছে। এ পর্যন্ত এ খামারে ছোটবড় মিলিয়ে ৭০টি গরু মোটাতাজা করা হয়েছে। সেইসঙ্গে একেকটি গরুকে নানা নামে, নানা উপমায় ডাকা হচ্ছে।


খামারের পরিচালক ফরিদ আহমদ বলেন, তিন বছর থেকে বিদেশি প্রজাতির একটি ষাড়ের বাচ্চাকে লালনপালন করে এখন তা কোরবানিতে বিক্রির উপযুক্ত করে তোলা হয়েছে। আদর করে এর নাম দেয়া হয়েছে ‘বিগ বস’। সে সাধারণত প্রাকৃতিক খাবার খেতে পছন্দ করে। যার কারণে দানাদার খাবার না দিয়ে ঘাস খেতে দেয়া হয়। এটির ওজন ৮ মণের কাছাকাছি। এরইমধ্যে দামও উঠেছে সাড়ে ৮ লাখ টাকা। বিক্রি করা হয়নি। হরিণ রঙের ‘সুলতান’ নামের আরেকটি বিশাল আকৃতির শাহীওয়াল জাতের ষাঁড় রয়েছে। তার চালচলনে রাজা বাদশাহী স্বভাব। এতে করে তার নাম রাখা হয়েছে ‘সুলতান’।


খামারের তত্ত্বাবধায়নে থাকা মো. নয়ন জানান, খামারে একটি গরু রয়েছে যার ওজন সাড়ে ছয় মণের মতো। ছয় লাখের কিছু ওপরে দাম উঠেছে। আরেকটু বেশি হলে বিক্রি করে দেবেন। গাঢ় কালো রঙের মায়াবি চেহারার আরেকটি বিদেশি প্রজাতির ষাঁড় রয়েছে। যার নাম রাখা হয়ে ভারতীয় হিন্দি ফিল্মের নায়ক ‘পুষ্পা’ নামে। এ রকম একাধিক গবাদিপশু রয়েছে পিকে খামারে। ঈদের আগেভাগেই বেচাকেনা শুরু হয়েছে। এ পর্যন্ত এ খামার থেকে চারটি গরু ১৩ লাখ টাকায় বিক্রি হয়েছে। 


নাজিম নামে আরেক খামার মালিক জানান, কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে তারা খুব ব্যস্ত সময় পার করছেন। খামারের এসব গরু এক বছর আগে দেশের বিভিন্ন হাট থেকে কিনে লালনপালন শুরু করেন তিনি। সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে খামারি মো. রনি গরু মোটাতাজা করছেন নিজ খামারে। তিনি বলেন, ‘আশা করা হচ্ছে অন্যান্য বছরের চেয়ে এ বছর কোরবানিতে ভালো ব্যবসা হবে।


রবিউল ইসলাম নামের অন্য এক খামারি বলেন, গত বছর রাজনৈতিক অস্থিরতা ও চোরাই পথে ভারত থেকে গরু আসায় ভালো দামে গরু বিক্রি হয়নি। লোকসানের পরও এ বছর তিনি ২০টি গরু মোটাতাজা করেছেন। ভুসি, চিটাগুড়, খুদকুড়া ও খৈলের দাম বৃদ্ধির পরও তাদের পরিবার ১৫ বছর ধরে গরু মোটাতাজা করছেন।


মৌলভীবাজার সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. শাহিনূর হক জানালেন, প্রবাসী অধ্যুষিত এ জেলায় দিনকে দিন বাড়ছে কোরবানির পশুর চাহিদা। সেইসঙ্গে বেড়েছে এর সংখ্যা। জেলায় ছোটবড় মিলিয়ে ৫৫০টি খামার রয়েছে। চাহিদার কথা ভেবে দেশি ও বিদেশি জাতের ছোটবড় গরু রয়েছে এসব খামারে।


তিনি বলেন, প্রতিটি খামারে কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে কঠোর নজরদারি রাখা হয়েছে। যাতে করে কেউ অসৎভাবে গরু মোটাতাজা না করতে পারে। জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা ডা. মো. আশরাফুল আলম খান জানালেন, চাহিদামতো জেলায় ৯৬ হাজার ৭২৮টি গবাদিপশু লালনপালন করে প্রস্তত করা হয়েছে। এ বছর বাইরের দেশ থেকে কোনো পশু না ঢুকলে খামারিরা ভালো দামে গবাদিপশু বিক্রি করতে পারবেন।