ঢাকা | বঙ্গাব্দ

ইসরায়েল নীতির প্রতিবাদে আরেক মার্কিন কর্মকর্তার পদত্যাগ

পদত্যাগের পর গিলবার্ট একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘কোনটা সঠিক এবং কোনটা ভুল তা স্পষ্টভাবেই বোঝা যায় এবং সেই প্রতিবেদনে যা আছে তা ভুল।’
  • | ৩১ মে, ২০২৪
ইসরায়েল নীতির প্রতিবাদে আরেক মার্কিন কর্মকর্তার পদত্যাগ স্টেট ডিপার্টমেন্টের পদত্যাগকারী কর্মকর্তার নাম স্টেসি গিলবার্ট
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের চলমান সংঘাতে সরাসরি ইসরায়েলের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। একইসঙ্গে গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধের বিষয়েও যুক্তরাষ্ট্র নীরব।

এই পরিস্থিতিতে পদত্যাগ করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের আরও একজন কর্মকর্তা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ইসরায়েল নীতির প্রতিবাদে পদত্যাগের ঘোষণা দেন তিনি। শুক্রবার (৩১ মে) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের একজন কর্মকর্তা চলতি সপ্তাহে পদত্যাগ করেছেন। তার নাম স্টেসি গিলবার্ট। বৃহস্পতিবার তিনি বলেছেন, কংগ্রেসে জমা দেওয়া প্রশাসনিক প্রতিবেদন তাতে পদত্যাগ করতে প্ররোচিত করেছে।

ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, ইসরায়েল গাজায় মানবিক সহায়তা সরবরাহ বাধাগ্রস্ত করছে না এবং এটি পুরোটা মিথ্যা। মূলত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ইসরায়েল নীতির প্রতিবাদে তিনি পদত্যাগ করেছেন বলে জানিয়েছেন স্টেসি গিলবার্ট।

রয়টার্স বলছে, স্টেসি গিলবার্ট মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের ব্যুরো অব পপুলেশন, রিফিউজিস অ্যান্ড মাইগ্রেশনে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করেছেন। তিনি কংগ্রেসে জমা দেওয়া বাইডেন প্রশাসনের ওই রিপোর্টে কাজ করা একজন বিশেষজ্ঞ ছিলেন।

পদত্যাগের পর গিলবার্ট একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘কোনটা সঠিক এবং কোনটা ভুল তা স্পষ্টভাবেই বোঝা যায় এবং সেই প্রতিবেদনে যা আছে তা ভুল।’

দীর্ঘ প্রায় আট মাস ধরে ইসরায়েল গাজায় আগ্রাসন চালাচ্ছে। আগ্রাসন চালানোর পাশাপাশি ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী গাজায় অবরোধ আরোপ করে রেখেছে। এমন অবস্থায় জাতিসংঘ এবং সাহায্য গোষ্ঠীগুলো দীর্ঘদিন ধরে গাজাজুড়ে সাহায্য পৌঁছাতে এবং বিতরণে বিভিন্ন ধরনের বাধার অভিযোগ করে আসছে।

আর এর মধ্যেই পদত্যাগ করলেন স্টেসি গিলবার্ট। তিনি ২০ বছরেরও বেশি মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টে কাজ করেছেন। তিনি বলেছেন, স্টেট ডিপার্টমেন্টের বিতর্কিত সেই রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার দিনই তিনি তার অফিসকে অবহিত করেন, তিনি পদত্যাগ করবেন। আর গত মঙ্গলবার ছিল তার শেষ দিন।

মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের ডেপুটি মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, তিনি কর্মীদের সমস্যা নিয়ে মন্তব্য করবেন না তবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর ভিন্ন মত ও দৃষ্টিভঙ্গিকে স্বাগত জানায়।

তিনি আরও বলেন, প্রশাসন প্রতিবেদনের পাশে দাঁড়িয়েছে এবং বেসামরিক নাগরিকদের ক্ষতি এড়াতে এবং অবিলম্বে গাজায় মানবিক সহায়তার প্রবেশাধিকার সম্প্রসারণের জন্য ইসরায়েল সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রেখেছে।

ওয়াশিংটনে অবস্থিত ইসরায়েলি দূতাবাস তাৎক্ষণিকভাবে গিলবার্টের অভিযোগের বিষয়ে মন্তব্যের অনুরোধে জবাব দেয়নি বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের গাজা নীতির প্রতিবাদে মার্কিন কর্মকর্তাদের পদত্যাগের ঘটনা এটিই প্রথম নয়। গত বছরের ৭ অক্টোবর সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে সাবেক একজন মার্কিন সেনা কর্মকর্তা-সহ বাইডেন প্রশাসনের কয়েকজন কর্মকর্তা এবং নিয়োগপ্রাপ্তরা যুক্তরাষ্ট্রের গাজা নীতির বিরোধিতা করে প্রকাশ্যে পদত্যাগ করেছেন।

মূলত গাজা উপত্যকায় ক্রমবর্ধমান মৃত্যুর সংখ্যা এবং ইসরায়েলি বাহিনী অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডে ফিলিস্তিনিদের ওপর গণহত্যা চালাচ্ছে এমন অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও ইসরায়েলের প্রতি প্রেসিডেন্ট বাইডেনের দ্ব্যর্থহীন সমর্থন নিয়ে খোদ যুক্তরাষ্ট্রেই ব্যাপক ক্ষোভ রয়েছে এবং এর মধ্যেই একের পর এক কর্মকর্তার পদত্যাগের ঘটনা সামনে এসেছে।

এর আগে চলতি মে মাসের মাঝামাঝিতে ইসরায়েলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত সমর্থনের প্রতিবাদে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনের আরও একজন কর্মী প্রকাশ্যে পদত্যাগ করেন। পদত্যাগকৃত ওই কর্মকর্তার নাম লিলি গ্রিনবার্গ কল।

তিনি মার্কিন স্বরাষ্ট্র দপ্তরের চিফ অব স্টাফের বিশেষ সহকারী হিসেবে দায়িত্বপালন করছিলেন। লিলি গ্রিনবার্গ কল তার পদত্যাগ পত্রে লিখেছেন, তিনি ‘তার বিবেক ও বিচারবুদ্ধিকে সঙ্গে নিয়ে এই প্রশাসনের প্রতিনিধিত্ব করা চালিয়ে যেতে পারেন না’।

অবশ্য লিলি গ্রিনবার্গ কল নিজেও একজন ইহুদি এবং গত বছরের অক্টোবরে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর থেকে প্রেসিডেন্ট বাইডেন যেসব মন্তব্য করেছেন তারও নিন্দা করেন তিনি।

এর আগে চলতি মাসেই যুক্তরাষ্ট্রের এক সেনা কর্মকর্তা গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসনে ওয়াশিংটনের সমর্থনের প্রতিবাদে পদত্যাগ করেন। পদত্যাগকৃত ওই সেনা কর্মকর্তার নাম হ্যারিসন মান। তিনি মার্কিন সামরিক বাহিনীর প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা ছিলেন।

হ্যারিসন মান তার পদত্যাগের চিঠি নিজের লিঙ্কডইনে প্রকাশ করেছিলেন। সেখানে তিনি বলেছেন, ইসরায়েলকে দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের ‘প্রায় অকুণ্ঠ ও নিঃশর্ত সমর্থন হাজার হাজার নিরীহ ফিলিস্তিনিদের হত্যা ও অনাহারে রাখতে ভূমিকা রেখেছে।’

এর আগে গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের গাজা নীতির বিরোধিতা করে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আরবি ভাষার মুখপাত্র হালা রাহারিত পদত্যাগ করেন। সেসময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম লিঙ্কডইনে দেওয়া এক পোস্টে এ তথ্য নিজেই নিশ্চিত করেন তিনি।

লিঙ্কডইন পোস্টে তিনি বলেন, ‘পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মানজনক পদে ১৮ বছর চাকরি করার পর ২০২৪ সালের এপ্রিলে আমি পদত্যাগ করেছে। গাজা ইস্যুতে মার্কিন সরকারের নীতিই এর কারণ।’

এর আগে গত মার্চ মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের গাজা নীতির প্রতিবাদে পদত্যাগ করেন মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের মানবাধিকার কর্মকর্তা অ্যানেল শেলিন। মধ্যপ্রাচ্যের এই বিশ্লেষক মার্কিন সরকারের পক্ষে মানবাধিকার বিষয়ে প্রচারের পাশাপাশি এই সংক্রান্ত দায়িত্বও পালন করতেন।

শেলিনের পদত্যাগের আগে গত বছরের অক্টোবরে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের আরেক কর্মকর্তা জশ পল পদত্যাগ করেন। বাইডেনের গাজা নীতির প্রতিবাদে পদত্যাগ করা ওই কর্মকর্তা ছিলেন স্টেট ডিপার্টমেন্টের রাজনৈতিক-সামরিক বিষয়ক ব্যুরোর একজন পরিচালক।

এছাড়া একই কারণে গত জানুয়ারিতে পদত্যাগ করেন মার্কিন শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তা তারিক হাবাশ। জ্যেষ্ঠ এই মার্কিন কর্মকর্তা যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা বিভাগের পরিকল্পনা, মূল্যায়ন ও নীতি উন্নয়নের অফিসের বিশেষ সহকারী পদে ছিলেন।