ঢাকা | বঙ্গাব্দ

কেন ফিকে হলো মোদি ম্যাজিক?

বেশ কয়েক বছর ধরেই জোট গঠনের চেষ্টা করছে বিরোধী দলগুলো। কিন্তু আসন বণ্টন ও দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্যের কারণ তা বারবার ভেস্তে যায়। মাত্র এক বছর আগে এক মঞ্চে উঠতে সক্ষম হন বিরোধী নেতারা।
  • | ০৪ জুন, ২০২৪
কেন ফিকে হলো মোদি ম্যাজিক? ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি

ভারতে টানা এক দশক ধরে দাপটের সঙ্গে একদলীয় শাসন চর্চা করে গেছে দেশটির প্রধানমন্ত্রী ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। মূলত ধর্মীয় মেরুকরণকে পুঁজি করে গত দুইবার ক্ষমতায় এসেছে দলটি, যা তথাকথিত মোদি ম্যাজিক হিসেবে পরিচিত। কিন্তু ১৮তম লোকসভায় অনেকটাই ফিকে হয়ে গেছে মোদি ম্যাজিক, থাকছে না বিজেপির দাপটও। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাতে যাচ্ছে নরেন্দ্র মোদির দল। দীর্ঘদিন পর ভোটের মাঠে জাতীয় কংগ্রেস প্রভাব দেখাচ্ছে।

মঙ্গলবার (৪ জুন) ভোটগণনার সর্বশেষ ঘোষিত ফলাফল এবং সম্ভাব্য ফলাফল সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছে।

ইতোমধ্যে ঘোষিত ফলাফল থেকে এটা স্পষ্ট, তৃতীয়বারের মতো ভারত শাসনের ভার নরেন্দ্র মোদির হাতেই থাকছে। তবে ২০১৪ এবং ২০১৯ এর মতো এবার লোকসভায় একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকছে না বিজেপির। ভোটের প্রচারে নরেন্দ্র মোদি বারবার ‘আব কি বার, ৪০০ পার’ স্লোগান তুলেছেন। কিন্তু সেই আশা পূরণ হবে না। ২৪০ পার করাই কঠিন হয়ে পড়েছে! ৫৪৩ আসনের লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজন ২৭২ আসন।

এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী, বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট ২৯০ আসনে এগিয়ে রয়েছে। আর কংগ্রেসের ইন্ডিয়া জোট এগিয়ে রয়েছে ২৩৫ আসনে।

স্পষ্টত জোট সরকারই গঠন করতে যাচ্ছে বিজেপি। তার মানে সরকার গঠনের জন্য এবার মোদিকে এনডিএর দুই শরিক—চন্দ্রবাবু নায়ডুর তেলেগু দেশম পার্টি (টিডিপি) এবং নিতীশ কুমারের জেডিইউর ওপর নির্ভর করতে হবে। কিন্তু এখানেও ঝুঁকি রয়েছে। অতীতে এই দুই নেতার একাধিকবার এনডিএ জোট ত্যাগের ইতিহাস রয়েছে।

যাই হোক সব ঠিকঠাক থাকলে নরেন্দ্র মোদি ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর রেকর্ড স্পর্শ করবেন। প্রথম প্রধানমন্ত্রী নেহরু টানা তিন দফায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। অবশ্য তার মতো একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার রেকর্ড হয়তো মোদি ভাঙতে পারবেন না।

মোদির এই ভরাডুবির কারণ হিসেবে কট্টর হিন্দুত্ববাদের মাধ্যমে হওয়া ধর্মীয় মেরুকরণকে চিহ্নিত করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, মোদির এই ‘কৌশল’ ভালোভাবে নেয়নি অনেকেই। যার বড় প্রমাণ হিসেবে তারা উল্লেখ করছেন উত্তরপ্রদেশের কথা। সেখানে এবার সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাতে যাচ্ছে বিজেপি।

এ প্রসঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘ওরা কম চেষ্টা করেনি। বিধায়কদের অর্থ দিয়েছে, ভয় দেখিয়েছে, কিন্তু শেষপর্যন্ত কিছু করতে পারেনি। উল্টে যে অযোধ্যা নিয়ে ওরা এত কিছু করল, সেখানেই হেরে গিয়েছে।’

এই ভোটের আরেকটি বড় খবর হলো, এক দশকে প্রায় পর্যুদস্ত ন্যাশনাল কংগ্রেস ভালোভাবেই জাতীয় রাজনীতিতে ফিরে আসার ইঙ্গিত মিলছে। বহুদিন পর অন্তত লোকসভায় বিরোধী দলের আসন অলংকৃত করতে পারেন কংগ্রেস নেতা। এই পদ পেতে কংগ্রেসকে জিততে হবে ৫৫টি আসনে। এবার ৯০ থেকে ১০০টি আসনে জিততে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে। যেখানে ২০১৪ সালে লোকসভায় মাত্র ৪৪ এবং ২০১৯ সালে ৫২টি আসনে জিতেছিল কংগ্রেস।

এদিকে ইন্ডিয়া জোট ২৩৫ আসন জয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে লোকসভায় আর বিজেপির একক আধিপত্য থাকছে না। সরকার চালাতে বেশ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হতে পারে ক্ষমতাসীন বিজেপিকে।

বেশ কয়েক বছর ধরেই জোট গঠনের চেষ্টা করছে বিরোধী দলগুলো। কিন্তু আসন বণ্টন ও দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্যের কারণ তা বারবার ভেস্তে যায়। মাত্র এক বছর আগে এক মঞ্চে উঠতে সক্ষম হন বিরোধী নেতারা। কংগ্রেস, তৃণমূল, বামসহ আঞ্চলিক দলগুলো মিলে মাত্র এক বছর আগে গঠিত হয় ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টাল ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স (ইনডিয়া)। এই জোট ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ (ইউনাইটেড প্রোগ্রেসিভ অ্যালায়েন্স) জোটের বিলুপ্তি ঘটে।

২০২৩ সালের ২৩ জুন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী জেডিইউ প্রধান নিতীশ কুমারের ডাকে পাটনার বিরোধী জোটের বৈঠকে ১৫টি দল ছিল। জুলাইয়ে বেঙ্গালুরুতে সেই তালিকা বেড়ে হয় ২৬। কিন্তু চলতি বছরের জানুয়ারিতে নিতীশ সদলবলে ফিরে যান বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএতে। বিহারে তার দল ভালো করলেও ২০১৯ সালের তুলনায় আসন কমেছে বিজেপির।

ইন্ডিয়ার শরিক দলগুলোর মধ্যে অনেক ক্ষেত্রেই সম্পূর্ণ বা আংশিক আসন সমঝোতা হয়েছে এবারের ভোটে। পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল, কেরালায় বাম, পাঞ্জাবে আম আদমি পার্টি (আপ), জম্মু ও কাশ্মীরে পিডিপির মতো কিছু দল কংগ্রেসের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিদ্বন্দ্বিতাও করেছে।