উপজেলা নির্বাচন ঘিরে প্রকাশ্যে এসেছে রাজশাহীর প্রভাবশালী মেয়র এবং শহরের ৫ আসনের সাংসদ ও প্রতিমন্ত্রীর দ্বন্দ্ব। দলীয় ভোটাররা বেশ সক্রিয় হলেও আওয়ামী লীগের লবিং ও কোন্দল বেশ সক্রিয় উপজেলা নির্বাচন ঘিরে। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের সমর্থন নিয়ে মাঠ গোছাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন দলটির পুরাতন নেতা কর্মীরা। অপর দিকে রাজশাহী ৫ আসনের সংসদ পল্লী ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী আব্দুল ওয়াদুদ দারা সমর্থক নেতা কর্মীরা নিজেদের প্রার্থীর জানান দিতে বেশ তৎপর হয়ে মাঠে নেমেছেন।
আগামী ২১ মে রাজশাহীর পুঠিয়া দুর্গাপুর ও বাগমারা উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ঘিরে বেশ উত্তপ্ত নির্বাচনী এলাকা। দলের দুই অংশের নেতা কর্মীরা নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে জয়ী করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। বিএনপি মাঠে না থাকলেও এবার তারা আওয়ামী লীগের একটি পক্ষ হয়ে নির্বাচনী প্রচারণা করছেন। দল ভারী করতে সরকারি দলের একটি পক্ষ বিএনপির সহায়তা নিচ্ছেন। তবে এই নির্বাচনে পূর্বে নৌকা প্রতিকের বাইরে ভোট করা সরকার দলীয় নেতা কর্মীদের মাঝে তেমন ভোটের ইমেজ লক্ষ করা যায়নি।
ভোটারদের দাবি, দলীয় কোন্দলের কারণে কিছু বিতর্কিত ব্যক্তি সরকারি দলের নাম ব্যবহার করে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। যাদের নামের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে নানা অপকর্মের অভিযোগ। এই ব্যক্তিদের নির্বাচনে জয়ী করে নিজেদের প্রভাব বাড়াতেই তাদের অলিখিত ভাবে সমর্থন করছেন একটি পক্ষ।
রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থীতা করছেন আহসানুল হক মাসুদ। একসময়ে তিনি আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ পদ বহন করলেও এই নির্বাচনে স্থানীয় সংসদ পল্লী ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী আব্দুল ওয়াদুদ দারার কোন সমর্থন নেই। তার ভাগিনা জেলা আওয়ামী লীগের পদধারী আব্দুস সামাদও প্রার্থী। এছাড়া প্রার্থী হয়েছেন প্রতিমন্ত্রীর সমর্থক সাবেক ছাত্রলীগ নেতা জি এম হীরা বাচ্চু। দলীয় নেতা কর্মীরা বলছেন আহসানুল হক মাসুদ মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের পছন্দের প্রার্থী। অপর দুইজন প্রতিমন্ত্রীর পছন্দের। এই নিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা ত্রীমুখি সমর্থনে জড়িয়ে পড়েছেন। যে কোন সময় ভোটকে কেন্দ্র করে দ্বন্দে জড়াতে পারেন সমর্থকরা।
অপর দিকে দুর্গাপুর উপজেলাতে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শরিফুজ্জামান শরিফ হয়েছেন উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী। নেতা কর্মীরা বলছেন তিনি প্রতিমন্ত্রী আব্দুল ওয়াদুদ দারার নিকটতম ব্যক্তি। দুর্গাপুর অঞ্চলের যুবকদের আইডল হিসেবে নজর কেড়েছেন এই শরিফুজ্জামান শরিফ। প্রতিমন্ত্রীর সমর্থকরা তাকে জয়ী করতে নিরলস কাজ করছেন।
অপর দিকে একই উপজেলায় সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান, রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের পদধারী ব্যক্তি আব্দুল মজিদ সরদার চেয়ারম্যান হিসেবে প্রার্থীতা করছেন। দলীয় নেতা কর্মীদের দাবি তিনি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের পছন্দের প্রার্থী।
বাগমারা উপজেলাতে ও একই অবস্থা চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগ নেতা জাকিরুল ইসলাম সান্টু। বাগমারার স্থানীয় নেতা কর্মীরা বলছেন তিনি সংসদ অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ ও প্রতিমন্ত্রীর পছন্দের প্রার্থী। অপর দিকে তার প্রতিদ্বন্দিতা করছেন রাজশাহী অঞ্চলের আলোচিত ব্যক্তি আট বাবু ও নাছিমা নামের একজন প্রার্থী। স্থানীয়রা বলছেন বাগমারার সাবেক সংসদ ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হকের সমর্থন নিয়ে আটবাবু প্রার্থীতা করছেন।
সব থেকে ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে ২১ মের এই উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। মুঠোফোনে ফোন করলে দলীয় কোন্দল ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে কথা বলতে নারাজ রাজশাহী ৫ আসনের সংসদ পল্লী ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী আব্দুল ওয়াদুদ দারা।
বাগমারার সংসদ অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদের ঘনিষ্ঠ জন মুঠো ফোনে বলেন, আটবাবু নামের ব্যক্তির সম্বন্ধে খোঁজ খবর নিন। আটবাবু সর্বহারা দলের সক্রিয় সদস্য বলে দাবি করেন তিনি।
দলের সমর্থন ও পক্ষ গ্রহণের বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন মুঠোফোনে দৈনিক অধিকারকে বলেন, দলীয় ভাবে কাউকে সমর্থন করার কোন সুযোগ নেই। তিনি বলেন সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ ভোট গ্রহণের জন্য সর্বদা আমাদের প্রচেষ্টা।