শেখ হাসিনা সরকারের পতনের এক মাসের মাথায়, বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী হাবিবুল আউয়াল পদত্যাগের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। পদত্যাগপত্র প্রস্তুত করার পাশাপাশি সব প্রস্তুতি শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন। বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নির্বাচন কমিশন সাংবাদিক সম্মেলন ডাকবে। সেখানে আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগের ঘোষণা আসতে পারে বলে আভাস দেওয়া হয়েছে।
এর আগে বুধবার বিকেলে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল সংবাদ সম্মেলনের ব্যাপারে সাংবাদিকদের বলেন, কাল বিস্তারিত জানাবেন। কয়েকজন নির্বাচন কমিশনারের যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছে। এক কমিশনার জানিয়েছেন, ‘আমরা আগেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। বৃহস্পতিবার সপ্তাহের শেষ দিন। এরপর আমাদের চেয়ারে পাবেন না।’
এক দশকে দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। ২০২২ সালের পর নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, রাজনৈতিক পরিবর্তনের কারণে কেন এভাবে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেবেন সবাই? নির্বাচন বিশ্লেষক ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, তারা ভালো নির্বাচন করতে পারেননি, উল্টো ক্ষমতাসীনদের ইচ্ছা বাস্তবায়ন করেছেন। তাই নতুন সরকার আসার পর তারা পদে থাকতে চাচ্ছেন না।
বুধবার সিইসি ও তিন কমিশনার বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল, নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবীব খান, রাশেদা সুলতান ও মো. আলমগীর উপস্থিত ছিলেন। তবে আনিসুর রহমান উপস্থিত ছিলেন না। বৈঠক শেষে, নির্বাচন কমিশনের জনসংযোগ শাখার পরিচালক শরিফুল আলম জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার দুপুরে সাংবাদিকদের সঙ্গে সৌজন্য বিনিময় করবে নির্বাচন কমিশন। তবে এর কারণ জানানো হয়নি।
এক কমিশনার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, ‘আমাদের কেউ পদত্যাগ করতে বলেনি। আমরা নিজে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। কাল বিস্তারিত ঘোষণা করা হবে।’ কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সিইসি ও চার কমিশনার ইতোমধ্যে তাদের কার্যালয় ত্যাগ করার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। পদত্যাগপত্রও লেখা হয়েছে।
বুধবার, আগারগাঁও নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সামনে শতাধিক বিক্ষোভকারী কমিশনের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করেন। তারা কাজী হাবিবুল আউয়াল ও অন্যান্য কমিশনারদের পদত্যাগ এবং সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এম নুরুল হুদা ও রকিব উদ্দিন আহমেদের বিচার চেয়েছেন।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাষ্ট্রপতি নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করেন। এরপর ২৭ ফেব্রুয়ারি তারা শপথ নেন। নতুন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর, গাইবান্ধার একটি উপ-নির্বাচন বাতিল করা হয়। এরপর সিটি করপোরেশন ও স্থানীয় নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ ওঠে। কমিশন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। ২০২৩ সালে জাতীয় নির্বাচনের আগে, চারটি রাজনৈতিক দলকে নিবন্ধন না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কমিশনের বিরুদ্ধে।
বিশ্লেষক অধ্যাপক আহমেদ বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন তাদের নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে পারেনি। তাই পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যদি পদত্যাগ না করে, হয়তো ইমপিচ করা হতে পারে।’ বাংলাদেশে সিইসি ও সব কমিশনারদের পদত্যাগের কোনো নজীর নেই। যদি তারা আজ পদত্যাগ করেন, এটি হবে দেশের ইতিহাসে প্রথম ঘটনা। এই অবস্থায়, সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠানটির পাঁচটি পদে কেউ না থাকলে সংকট তৈরি হতে পারে। তবে অধ্যাপক আহমেদ জানিয়েছেন, ‘ইসি সচিবালয় দায়িত্ব পালন করবে। পরে নতুন কমিশনার নিয়োগ দেওয়া হবে।’