ঢাকা | বঙ্গাব্দ

ফিলিস্তিনিদের রাফাহ ছাড়ার নির্দেশ ইসরায়েলের

আরবি ভাষায় ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়ে, টেলিফোনে কল করে এবং যুদ্ধবিমান থেকে লিফলেট ফেলে রাফাহর বাসিন্দাদের শহরটির একাংশ ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েল।
  • | ০৬ মে, ২০২৪
ফিলিস্তিনিদের রাফাহ ছাড়ার নির্দেশ ইসরায়েলের রাফাহ ছাড়তে শুরু করেছে ফিলিস্তিনিরা

অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফাহর একাংশ খালি করে দিতে সেখানে বসবাসরত ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েল। সোমবার ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর নির্দেশের পর রাফার পূর্বাঞ্চল থেকে ইতিমধ্যে লোকজন সরে যেতে শুরু করেছেন।

সাত মাসের বেশি চলা হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধে ১০ লাখের বেশি বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি রাফাহতে আশ্রয় নিয়েছেন; যেখানে ইসরায়েলি বাহিনী সামরিক অভিযান শুরু করবে বলে দীর্ঘদিন ধরে হুমকি দিয়ে আসছে।

আরবি ভাষায় ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়ে, টেলিফোনে কল করে এবং যুদ্ধবিমান থেকে লিফলেট ফেলে রাফাহর বাসিন্দাদের শহরটির একাংশ ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েল। রাফাহর বাসিন্দারা বলেছেন, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী রাফার পূর্বাঞ্চলে ২০ কিলোমিটার দূরের একটি এলাকাকে ‘‘সম্প্রসারিত মানবিক অঞ্চল’’ বলে অভিহিত করে সেখানে ফিলিস্তিনিদের চলে যেতে বলেছে। এর আগে, বসন্তের তীব্র বৃষ্টিপাতের সময় সেখানে কিছু ফিলিস্তিনি আশ্রয় নেন।

গাজার ক্ষমতাসীন শাসকগোষ্ঠী হামাসের জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তা বলেছেন, রাফাহ থেকে ফিলিস্তিনিদের সরে যাওয়ার আদেশটি অত্যন্ত বিপজ্জনক উত্তেজনা তৈরি করবে; যার পরিণতি চরম হতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন।

ওয়াশিংটনের সঙ্গে ইসরায়েলের মিত্রতার কথা উল্লেখ করে হামাসের কর্মকর্তা সামি আবু জুহরি রয়টার্সকে বলেন, ‘‘মার্কিন প্রশাসন দখলদারিত্বের পাশাপাশি এই সন্ত্রাসবাদের জন্য দায়ী।’’

ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বলেছে, তারা ‘‘সীমিত পরিসরের’’ অভিযানের জন্য রাফাহর বাসিন্দাদের সরে যেতে উৎসাহ দিতে শুরু করেছে। তবে এই অভিযান কিংবা বাসিন্দাদের শহরটি খালি করে দেওয়ার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনও সময়সীমা নিয়ে কিছু জানায়নি ইসরায়েল।

রাফাহর শরণার্থী আবু রায়েদ বলেছেন, প্রবল বৃষ্টিপাত হচ্ছে এবং আমরা কোথায় যাব জানি না। চিন্তিত ছিলাম যে, এই দিনটি আসতে পারে। এখন আমার পরিবারকে কোথায় নিয়ে যাব, সেটাই আমাকে দেখতে হচ্ছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, রাফাহ ও এর আশপাশের যেসব এলাকায় ফিলিস্তিনি বাসিন্দাদের সরাতে চায় ইসরায়েল, সেসব এলাকায় আগে থেকে জনাকীর্ণ রয়েছে। সেখানে নতুন তাঁবু টানানোর কোনও জায়গা প্রায় নেই।

জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বলেছে, ইসরায়েলি অভিযান রাফাহতে আশ্রয় নেওয়া ১৪ লাখ মানুষের জন্য ধ্বংসাত্মক হবে। তবে তারা রাফাহতে মানুষকে সহায়তা করার জন্য সম্ভাব্য সব তৎপরতা চালিয়ে যাবে।

৭ অক্টোবর গাজা উপত্যকায় ব্যাপক ধ্বংসাত্মক যুদ্ধ শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। গাজা নগরীতে প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত করা ইসরায়েলি এই আগ্রাসনে সেখানকার জনজীবনে নেমে এসেছে বিপর্যয়। সাত মাস ধরে চলা ইসরায়েলের এই অভিযান ১০ লাখের বেশি ফিলিস্তিনি রাফায় আশ্রয় নিয়েছেন। এখন সেখানে হামাসের অগণিত যোদ্ধা রয়েছে বলে দাবি করে সামরিক অভিযান শুরু করার কথা জানিয়েছে ইসরায়েল।

গাজায় নতুন করে যুদ্ধবিরতি কার্যকরে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে একটি চুক্তির বিষয়ে আলোচনা চলছে। মিসরের রাজধানী কায়রোতে শুরু হওয়া এই শান্তি আলোচনায় হামাসের প্রতিনিধিরাও অংশ নিয়েছেন। এরমাঝেই ইসরায়েল রাফা খালি করার নির্দেশ দেওয়ায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হওয়া নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

এদিকে, রোববার সন্ধ্যা থেকে সোমবার ভোরের মধ্যে ইসরায়েলি বাহিনী দক্ষিণাঞ্চলীয় এই শহরের ১১টি বাড়িতে হামলা চালিয়েছে। হামলায় কয়েক ডজন মানুষ নিহত, আহত এবং ধ্বংসস্তূপের নিচে নিখোঁজ হয়েছেন।

অক্টোবর থেকে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের টানা আক্রমণে কমপক্ষে ৩৪ হাজার ৬৮৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, ইসরায়েলের হামলায় আরও ৭৮ হাজার ১৮ জন আহত হয়েছেন।

সূত্র: রয়টার্স, আলজাজিরা।