তিনি মুসলিম বাহিনীকে সিরিয়ায় যুদ্ধের জন্য পাঠানোর পূর্বে যা বলেছিলেন, তা ছিল শৃঙ্খলা, ন্যায়, এবং ইসলামী মূল্যবোধের প্রতি অবিচল থাকার আহ্বান।
অন্যায় থেকে বিরত থাকা: আবু বকর (রা.) তার সেনাপতিদের সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে, তারা যেন কোনো অবস্থাতেই অন্যায়ের পথে পা না দেয়। তিনি বলেছিলেন, তোমরা হত্যা করার আগে ভালোভাবে যাচাই করে দেখবে। কোনো শিশুকে, মহিলা বা বৃদ্ধকে হত্যা করবে না। এভাবে তিনি যুদ্ধের নৈতিকতা ও ইসলামী আদর্শের প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন।
কোনো নিরপরাধ ব্যক্তিকে হত্যা করা যাবে না: তিনি নির্দেশ দিয়েছিলেন, যদি তোমরা যুদ্ধে জয়ী হও, তবে নিরপরাধ, সাধারণ জনগণকে আঘাত করবে না, তাদের ক্ষতি করবে না। তার এই উপদেশ যুদ্ধের পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক থাকার পাশাপাশি মানুষের জীবনের মূল্য বোঝানোর জন্য ছিল।
ধর্মীয় স্থাপনা ও প্রাণী হত্যা না করার নির্দেশনা: আবু বকর (রা.) তার বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছিলেন যেন তারা কোনো ধর্মীয় স্থাপনা বা মন্দিরের প্রতি আঘাত না করে এবং কোনো প্রাণীও অহেতুক হত্যা না করা হয়। তিনি বলেছিলেন, এমন কিছু কাজ করবেন না যা ইসলামের শিক্ষা বিরোধী।
ইসলামী আদর্শে অবিচল থাকার আহ্বান: তিনি যুদ্ধের মাঠে গিয়েও তার সৈন্যদের কাছে ইসলামী নৈতিকতা অনুসরণ করতে উৎসাহিত করেছিলেন। তিনি বলেন, যুদ্ধে যেয়ে অবশ্যই ইসলামী আদর্শ ও নৈতিকতা পালন করবে। তোমাদের চরিত্র ও আচরণ হতে হবে ইসলামের সঙ্গতিপূর্ণ।
ধৈর্য ধারণ ও আত্মবিশ্বাস: সিরিয়ার উদ্দেশ্যে যাওয়ার আগে আবু বকর (রা.) তার বাহিনীর সদস্যদের ধৈর্য ধরার এবং লড়াইয়ের মধ্যে আত্মবিশ্বাসী থাকার জন্য বলেছিলেন। তিনি তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, শত্রু যদি তোমাদের সাথে যুদ্ধ করে, তবে তোমরা তাদের মোকাবেলা করো, কিন্তু মনে রেখো, তোমাদের উপর আল্লাহর সাহায্য রয়েছে।
আবু বকর (রা.) এর এই উপদেশের প্রমাণ ঐতিহাসিক গ্রন্থসমূহে রয়েছে, বিশেষত "ইবনে হিজর" এবং "আল-নাসাঈ"-এর হাদিস সংগ্রহে। এসব হাদিসের মধ্যে সিরিয়ায় যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সেনাপতিদের উপর আবু বকর (রাঃ) এর এসব নৈতিক উপদেশের বিশদ বিবরণ পাওয়া যায়।
একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হল, যখন আবু বকর (রা.) তার সেনাপতিদের উদ্দেশ্যে এই উপদেশ দেন, তখন তার উদ্দেশ্য ছিল মুসলিম বাহিনীকে শুধু সামরিক জয়ী করা নয়, বরং ইসলামি মূল্যবোধ ও মানবিকতার প্রতি অবিচল রাখতে। এর ফলে, মুসলিম বাহিনী সিরিয়ায় যাওয়ার পর তাদের আচরণ এবং কর্মপদ্ধতির মধ্যে ইসলামের আদর্শের প্রতিফলন দেখা যায়, যা পরবর্তীতে মুসলিম সমাজের একটি দৃষ্টান্ত হয়ে ওঠে।
আবু বকর (রাঃ) এর উপদেশ কেবল তার সময়েই নয়, বরং পরবর্তী যুগেও একটি মূল্যবান শিক্ষা হিসেবে বিবেচিত। তার এই উপদেশ থেকে বোঝা যায় যে, ইসলামে যুদ্ধ কেবল একটি সামরিক অভিযান নয়, বরং এটি একটি নৈতিক ও মানবিক সংগ্রাম। তিনি যে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন, তা আজও মুসলিম সমাজে প্রভাবশালী।
thebgbd.com/AR