র্যাবের হেলিকপ্টার থেকে গুলিবর্ষণ করে আন্দোলনকারীদের দমনের পরিকল্পনা হয়েছিল তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ধানমন্ডির শংকরের বাসায়। এই পরিকল্পনা এসেছিল র্যাবের সাবেক ডিজি ব্যারিস্টার হারুন-অর-রশীদের মাথা থেকে। পরে এতে যুক্ত হয়েছিলেন ডিএমপির ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনের তৎকালীন অতিরিক্ত কমিশনার খন্দকার মহিদ উদ্দিন।
সম্প্রতি দেশের একটি জাতীয় দৈনিকের বিশেষ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন সব চাঞ্চল্যকর তথ্য। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, তৎকালীন আইজিপি আবদুল্লাহ আল মামুন এই পরিকল্পনার বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে উৎসাহিত করেছিলেন। হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালানোর এই অভিযানের নামকরণ করা হয়েছিল ‘অপারেশন ক্লিনডাউন’। পরিকল্পনাটি শেখ হাসিনার নজরে আনা হলে তিনি অনুমোদন দেন। এরপরই জুলাই আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হেলিকপ্টার থেকে নির্বিচারে গুলি চালানো হয়।
র্যাব ও পুলিশের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, আন্দোলন দমনে হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালানোর এই ঘটনাটি দেশের ইতিহাসে প্রথম। র্যাবের বর্তমান মহাপরিচালক একেএম শহিদুর রহমান জানান, হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালানোর বিষয়ে তদন্ত চলছে। পাশাপাশি গুমসহ অন্যান্য অভিযোগ নিয়েও তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।
র্যাবের পক্ষ থেকে শুরুতে গুলি চালানোর অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছিল। এক সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছিল, র্যাব হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালায়নি; বরং টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করেছিল। তবে অনুসন্ধানে জানা যায়, র্যাব এয়ার উইংয়ের যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি বেল ৪০৭ হেলিকপ্টার ব্যবহার করে গুলি চালিয়েছিল।
আন্দোলন দমনে র্যাবের হেলিকপ্টারের ব্যবহার ১৩ জুলাই থেকে বেড়ে যায়। যাত্রাবাড়ীর রায়েরবাগ, চিটাগাং রোড এবং মিরপুর এলাকায় হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালানোর ঘটনা ঘটে। এতে অনেক মানুষ নিহত ও আহত হন।
গুলিবর্ষণে ১৯ জুলাই জোবাইদ হোসেন ইমন নামে ১২ বছর বয়সী এক শিশু নিহত হয়। এছাড়া নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় গৃহবধূ সুমাইয়া এবং যাত্রাবাড়ীতে আব্দুল আহাদ নামে ৪ বছরের এক শিশু প্রাণ হারায়।
ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী আকবর হোসেন জানান, ২২ জুলাই নিউমার্কেট এলাকায় হেলিকপ্টার থেকে টিয়ারশেল ও গুলি চালানোর ঘটনা ঘটে। হেলিকপ্টার থেকে গুলিবর্ষণে ৯ শিশুর মৃত্যুর তদন্ত চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের হয়েছে।
৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর র্যাবের ডিজি ও খন্দকার মহিদ উদ্দিনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়। তাদের নামে একাধিক হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। র্যাবের সাবেক ডিজি ভারতে পাড়ি জমিয়েছেন বলে জানা গেছে।
র্যাবের বর্তমান মহাপরিচালক জানান, হেলিকপ্টার থেকে গুলিবর্ষণের ঘটনায় দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে। পাশাপাশি গুম কমিশনের তদন্তে র্যাব সর্বোচ্চ সহযোগিতা করছে। তিনি আরও জানান, র্যাব জনগণের নিরাপত্তা ও মানবাধিকার রক্ষায় কাজ করে যাবে।
thebgbd.com/NIT