ঢাকা | বঙ্গাব্দ

শিক্ষকতা নিয়ে ইসলামে যা বলা হয়েছে

জ্ঞান অর্জন ও তা বিতরণের গুরুত্ব সম্পর্কে কোরআন ও হাদিসে বহুবার আলোচনা করা হয়েছে।
  • নিজস্ব প্রতিবেদক | ৩০ জানুয়ারি, ২০২৫
শিক্ষকতা নিয়ে ইসলামে যা বলা হয়েছে ফাইল ছবি

ইসলামে শিক্ষকতা একটি সম্মানজনক ও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। জ্ঞান অর্জন ও তা বিতরণের গুরুত্ব সম্পর্কে কোরআন ও হাদিসে বহুবার আলোচনা করা হয়েছে। একজন শিক্ষক কেবল জ্ঞান বিতরণকারী নন, বরং তিনি নৈতিকতা, আদর্শ ও সমাজের ভবিষ্যৎ নির্মাণে ভূমিকা রাখেন।  


কোরআনে আল্লাহ বলেন, "বলুন, যারা জানে এবং যারা জানে না, তারা কি সমান হতে পারে?" (সূরা যুমার: ৯)। এই আয়াত থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে, জ্ঞানী ব্যক্তি, বিশেষ করে শিক্ষক, সাধারণ মানুষের তুলনায় উচ্চ মর্যাদার অধিকারী। শিক্ষকদের কাজ শুধু তথ্য দেওয়া নয়, বরং শিক্ষার্থীদের সঠিক পথে পরিচালিত করাও তাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।  


রাসুলুল্লাহ (সা.) শিক্ষাকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করেছেন। তিনি বলেন, "নিশ্চয়ই আমি শিক্ষক হিসেবে প্রেরিত হয়েছি।" (ইবনে মাজাহ: ২২৯)। এই হাদিস প্রমাণ করে যে, শিক্ষা দেওয়া শুধু সাধারণ কাজ নয়, এটি নবীজির (সা.) দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত ছিল। তিনি নিজের জীবনেই শিক্ষকতার সর্বোত্তম উদাহরণ স্থাপন করেছেন।  


আরেকটি হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, "যে ব্যক্তি কল্যাণকর কোনো জ্ঞান শেখায়, তার জন্য সেই জ্ঞান অনুসরণকারীদের নেকি সমপরিমাণ সওয়াব লেখা হয়, এবং অনুসরণকারীদের সওয়াব থেকে কিছুই কমানো হয় না।" (সহিহ মুসলিম: ২৬৭৪)। এই হাদিস শিক্ষকদের মর্যাদা আরও বাড়িয়ে তোলে, কারণ তাদের শেখানো জ্ঞান প্রজন্মের পর প্রজন্ম উপকৃত হতে পারে এবং তারা অনন্ত সওয়াবের অধিকারী হতে পারেন।  


শিক্ষকের প্রতি সম্মান প্রদর্শন ইসলামে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, "তোমরা তোমাদের শিক্ষককে সম্মান করো, কারণ তিনি তোমাদের অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে যান।" (তিরমিজি: ২৬৫৮)। এই হাদিস থেকে বোঝা যায় যে, শিক্ষক কেবল তথ্য প্রদানকারী নন, বরং নৈতিক ও আত্মিক দিক থেকেও শিক্ষার্থীদের উন্নতির জন্য কাজ করেন।  


কোরআনে আরও বলা হয়েছে, "আল্লাহ তাদের মর্যাদা বাড়িয়ে দেন, যারা ঈমান এনেছে এবং জ্ঞান লাভ করেছে।" (সূরা মুজাদালা: ১১)। এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, যারা জ্ঞান অর্জন ও বিতরণ করে, তারা আল্লাহর কাছে বিশেষ মর্যাদার অধিকারী।  


ইসলামিক ইতিহাসে অনেক বিখ্যাত শিক্ষকের নাম পাওয়া যায়, যারা ইসলামী শিক্ষা ও বিজ্ঞানের প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। ইমাম গাজালি, ইমাম বুখারি, ইবনে সিনা—এরা সবাই শিক্ষক হিসেবে অসাধারণ অবদান রেখেছেন।  


শিক্ষকতা শুধু জীবিকা অর্জনের মাধ্যম নয়, বরং এটি ইবাদতের অংশ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে, যদি তা সঠিক উদ্দেশ্যে পরিচালিত হয়। ইসলামে শিক্ষকদের মর্যাদা এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে, তাদের সম্মান করা এবং তাদের শেখানো জ্ঞান কাজে লাগানোকে সওয়াবের কাজ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। শিক্ষকের দায়িত্ব হলো সঠিক জ্ঞান বিতরণ করা, শিক্ষার্থীদের নৈতিকতা শেখানো এবং তাদের সৎ পথে পরিচালিত করা। ইসলামের দৃষ্টিতে এটি একটি মহৎ দায়িত্ব, যার পুরস্কার দুনিয়া ও আখিরাতে উভয় ক্ষেত্রেই পাওয়া যাবে।


thebgbd.com/NIT