ঢাকা | বঙ্গাব্দ

যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে রাজি ইউক্রেন

এই প্রস্তাবগুলো রাশিয়ার কাছে উপস্থাপন করা হবে। রাশিয়া রাজি থাকলে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে।
  • অনলাইন ডেস্ক | ১২ মার্চ, ২০২৫
যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে রাজি ইউক্রেন বৈঠকে মার্কিন ও ইউক্রেন কর্মকতারা।

সৌদি আরবের জেদ্দায় অনুষ্ঠিত যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেন বৈঠকে ত্রিশ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব গ্রহণে রাজি হয়েছে ইউক্রেন। বৈঠকের পর মঙ্গলবার (১১ মার্চ) এক যৌথ বিবৃতিতে ঘোষণা করা হয়েছে, একটি তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব গ্রহণ করতে প্রস্তুত ইউক্রেন। যা উভয় পক্ষের সম্মতিতে বাড়ানো যেতে পারে এবং রাশিয়া রাজি থাকলে একযোগে তা বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। 


এখন এই প্রস্তাবগুলো রাশিয়ার কাছে উপস্থাপন করা হবে। রাশিয়া রাজি থাকলে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব আকাশ, সমুদ্র ও স্থলু সবক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে। সৌদি বার্তা সংস্থা ‘এসপিএ’ এক বিবৃতিতে একথা জানায়।


এছাড়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দুই দেশের মধ্যে খনিজ চুক্তি ‘যত তাড়াতাড়ি সম্ভব’ সম্পন্ন করা হবে। অর্থনীতি সম্প্রসারণ ও দীর্ঘমেয়াদি সমৃদ্ধি এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ইউক্রেন এ চুক্তি সম্পাদন করবে। এছাড়া ইউক্রেনের সঙ্গে গোয়েন্দা তথ্য ভাগাভাগিসহ নিরাপত্তা সহায়তা পুনরায় শুরু করবে যুক্তরাষ্ট্র। দুই দেশের মধ্যে এ ঐকমত্য এমন সময় এলো, যখন রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন।


মস্কোয় হামলায় অন্তত তিনজন নিহত এবং ১৮ জন আহত হয়েছেন। রুশ কর্মকর্তারা জানান, হামলার জেরে সাময়িক সময়ের জন্য মস্কোর চারটি বিমানবন্দর বন্ধ হয়ে যায়। এমন একসময় এ হামলা হলো, যখন তিন বছরের যুদ্ধাবসানে যুদ্ধবিরতি ও খনিজসম্পদ নিয়ে সমঝোতায় পৌঁছতে সৌদি আরবের জেদ্দায় আলোচনায় বসেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেন।


এদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির অফিসের প্রধান আন্দ্রি ইয়ারমাক বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা শুরু হয়েছে গঠনমূলক উপায়ে। আমরা স্থায়ী যুদ্ধবিরতির জন্য কাজ করছি। এর আগে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বিবিসি’কে বলেছেন, আলোচনায় ‘ভালো কিছু’ হবে। আলোচনায় মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় রয়েছে সৌদি আরব। হোয়াইট হাউসে জেলেনস্কির সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাগ্বিতণ্ডার পর এটা দু’পক্ষের মধ্যে প্রথম বৈঠক। এর আগে রুশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন প্রতিনিধিরা।


রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে মঙ্গলবার এএফপি জানায়, ৩৩৭টি ড্রোন দিয়ে রাশিয়াজুড়ে এ হামলা চালানো হয়েছে। এরমধ্যে মস্কো অঞ্চল টার্গেট করে ৯১টি। এসব ড্রোন ভূপাতিত করা হয়েছে। রুশ বাহিনী পশ্চিম রাশিয়ার কুর্স্ক অঞ্চলে ইউক্রেনের হাজার হাজার সেনাকে ঘিরে ফেলার চেষ্টার সময় মঙ্গলবার ভোরের দিকে এ হামলা ঘটে। যুদ্ধ চলাকালে বারবার বড় ধরনের রুশ হামলার শিকার হয়েছে কিয়েভ। সোমবার রাতে একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ১২৬টি ড্রোন দিয়ে ইউক্রেনে হামলা চালায় রাশিয়া।


মস্কোর মেয়র সের্গেই সোবিয়ানিন বলেন, এটি ছিল সবচেয়ে বড় ইউক্রেনীয় ড্রোন হামলা। মস্কো রাশিয়ার বৃহত্তম শহর, যেখানে কমপক্ষে ২ কোটি ১০ লাখ লোকের বাস। একজন জ্যেষ্ঠ রুশ আইনপ্রণেতা মনে করেন, ইউক্রেন মস্কোতে যে হামলা চালিয়েছে, এর জবাবে রাশিয়ার উচিত ‘ওরেশনিক’ হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইউক্রেনে হামলা চালানো। স্থানীয় ও রাশিয়ার সরকারি কর্মকর্তারা জানান, কয়েকটি ড্রোন আবাসিক এলাকায় আঘাত হানে। 


নিহতদের মধ্যে দু’জন শ্রমিক রয়েছেন। আহত হয়েছেন তিন শিশুসহ আরো ১৮ জন। রাশিয়ার বিমান চলাচল পর্যবেক্ষণ সংস্থা জানায়, হামলার পর চারটি বিমানবন্দরেই ফ্লাইট স্থগিত করা হয়। পরে সেগুলো চালু হয়েছে। 


সম্প্রতি ইউক্রেনে শান্তি প্রতিষ্ঠায় তোড়জোড় শুরু করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ প্রেক্ষাপটে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধের তীব্রতা ও প্রাণহানি বেড়েছে। এদিকে রুশ সেনাদের ভয়াবহ আক্রমণে টিকতে না পেরে কুর্স্ক অঞ্চলের দখলকৃত এলাকা থেকে পিছু হটছেন ইউক্রেনীয় সেনারা। এরই মধ্যে অন্তত সাতটি গ্রাম পুনরুদ্ধারের দাবি করেছে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।


সূত্র: এসপিএ


এসজেড