ঢাকা | বঙ্গাব্দ

সাইনোসাইটিস: কারণ, ক্ষতি ও প্রতিকার

সাইনোসাইটিস হলো সাইনাসের প্রদাহ বা সংক্রমণ, যা ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক বা অ্যালার্জির কারণে হতে পারে।
  • | ১৮ মার্চ, ২০২৫
সাইনোসাইটিস: কারণ, ক্ষতি ও প্রতিকার সাইনোসাইটিস

সাইনোসাইটিস হলো সাইনাসের প্রদাহ বা সংক্রমণ, যা ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক বা অ্যালার্জির কারণে হতে পারে। এটি তীব্র (অ্যাকিউট) বা দীর্ঘস্থায়ী (ক্রনিক) হতে পারে এবং নাক বন্ধ হওয়া, মাথাব্যথা, চোখের চারপাশে ব্যথা ও চাপ সৃষ্টি করতে পারে।


সাইনাস কী এবং এটি কীভাবে কাজ করে?


সাইনাস হলো নাকের চারপাশের বায়ুপূর্ণ ফাঁপা গহ্বর, যা মুখমণ্ডলের হাড়ের ভেতরে থাকে। এগুলো চার ধরনের হয়:


ম্যাক্সিলারি সাইনাস (গালের হাড়ে)


ফ্রন্টাল সাইনাস (কপালের হাড়ে)


ইথময়েড সাইনাস (চোখের মাঝামাঝি)


স্পেনয়েড সাইনাস (নাকের গভীরে)


সাইনাস সাধারণত মিউকাস (শ্লেষ্মা) তৈরি করে, যা নাকের ভেতর দিয়ে বেরিয়ে গিয়ে ব্যাকটেরিয়া, ধুলোবালি ও অন্যান্য ক্ষতিকর উপাদান পরিষ্কার রাখে। কিন্তু যখন কোনো কারণে সাইনাসের ভেতরের অংশ ফুলে যায় বা বন্ধ হয়ে যায়, তখন মিউকাস জমে গিয়ে সংক্রমণ বা প্রদাহ সৃষ্টি করে, যা সাইনোসাইটিস হিসেবে পরিচিত।


সাইনোসাইটিসের কারণ


সাইনোসাইটিসের মূল কারণগুলো হলো—


ভাইরাস – সাধারণ সর্দি-কাশি থেকে সাইনাস আক্রান্ত হতে পারে।


ব্যাকটেরিয়া – ভাইরাল সংক্রমণের পর কোনো ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ হলে সাইনোসাইটিস হতে পারে।


অ্যালার্জি – ধুলো, ফুলের রেণু বা পশুর লোমের সংস্পর্শে এলে সাইনাস ফুলে যেতে পারে।


সাইনাসের গঠনগত সমস্যা – নাকের হাড় বাঁকা (ডেভিয়েটেড ন্যাসাল সেপটাম) থাকলে সাইনোসাইটিস হওয়ার আশঙ্কা বেশি।


পরিবেশগত দূষণ – ধোঁয়া, ধুলাবালি বা রাসায়নিক পদার্থ সাইনাস প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে।


সর্দি বা ঠান্ডা লাগা – দীর্ঘস্থায়ী ঠান্ডা বা নাক বন্ধ থাকলে সাইনাসে মিউকাস জমে গিয়ে সংক্রমণ হতে পারে।


সাইনোসাইটিস কীভাবে ক্ষতি করে?


১. শ্বাসকষ্ট ও নাক বন্ধ হওয়া


সাইনাসে মিউকাস জমে গেলে নাক বন্ধ হয়ে যায়, ফলে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়।


২. মাথাব্যথা ও চাপ অনুভূতি


সাইনাস বন্ধ হয়ে গেলে কপাল, চোখ, গাল ও মাথার পেছনের অংশে ব্যথা হতে পারে।


৩. গন্ধ ও স্বাদ অনুভূতি কমে যাওয়া


সাইনাসে ইনফেকশন হলে নাকের সেন্সরি রিসেপ্টর ঠিকমতো কাজ করতে পারে না, ফলে গন্ধ ও স্বাদ অনুভূতি কমে যায়।


৪. দীর্ঘস্থায়ী সর্দি-কাশি ও গলা ব্যথা


সাইনাস থেকে মিউকাস গলায় গিয়ে খুশখুশে কাশি ও গলা ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে।


৫. চোখের সংক্রমণ


সাইনোসাইটিসের সংক্রমণ চোখের দিকে ছড়িয়ে গেলে দৃষ্টিশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বা চোখ লাল হয়ে ফুলে যেতে পারে।


৬. ব্রেইন সংক্রমণের ঝুঁকি


কিছু ক্ষেত্রে সাইনোসাইটিসের সংক্রমণ মস্তিষ্কের দিকে ছড়িয়ে পড়ে, যা মেনিনজাইটিস বা মস্তিষ্কের সংক্রমণ ঘটাতে পারে।


সাইনোসাইটিসের চিকিৎসা ও প্রতিকার


১. বাসায় করণীয়


বাষ্প গ্রহণ করুন – গরম পানির ভাপ নিলে সাইনাস খুলতে সাহায্য করে।


পর্যাপ্ত পানি পান করুন – মিউকাস পাতলা রাখতে সাহায্য করে।


গরম পানির সেঁক দিন – কপাল ও গালের ওপর গরম কাপড় দিয়ে সেঁক দিলে আরাম পাওয়া যায়।


নাক পরিষ্কার রাখুন – নরমাল স্যালাইন ওয়াশ বা নেটি পট দিয়ে নাক পরিষ্কার করলে সাইনাস খুলে যায়।


২. ওষুধ


ব্যথানাশক ওষুধ – প্যারাসিটামল বা আইবুপ্রোফেন ব্যথা ও জ্বর কমাতে সাহায্য করে।


ডিকনজেস্ট্যান্ট স্প্রে – নাক খোলার জন্য সাময়িকভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে দীর্ঘদিন ব্যবহার করা ঠিক নয়।


অ্যান্টিহিস্টামিন – যদি অ্যালার্জির কারণে হয়, তবে অ্যান্টিহিস্টামিন ওষুধ উপকারী হতে পারে।


অ্যান্টিবায়োটিক – যদি ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ হয়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যান্টিবায়োটিক খেতে হতে পারে।


৩. সার্জারি (যদি প্রয়োজন হয়)


দীর্ঘস্থায়ী (ক্রনিক) সাইনোসাইটিস হলে এন্ডোস্কোপিক সাইনাস সার্জারি (FESS) করা যেতে পারে।


যদি নাকের হাড় বাঁকা থাকে বা পলিপ থাকে, তবে তা অপসারণের জন্য অপারেশন লাগতে পারে।


সাইনোসাইটিস প্রতিরোধের উপায়


প্রচুর পানি পান করুন।


ধুলাবালি ও ধোঁয়া এড়িয়ে চলুন।


অ্যালার্জি থাকলে অ্যালার্জির উৎস থেকে দূরে থাকুন।


ঠান্ডা লাগলে দ্রুত চিকিৎসা নিন।


নাকে নরমাল স্যালাইন স্প্রে ব্যবহার করুন।


সাইনোসাইটিসের সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হলে বা তীব্র ব্যথা, জ্বর, চোখ ফুলে যাওয়া বা দৃষ্টিশক্তির সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।